দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ভয়াবহ দরপতনের মধ্যে পড়েছে পুঁজিবাজার। ক্রেতা সংকটে প্রতিদিনই পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের পর দরপতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। ফলে ঈদের বাড়তি খরচ মেটাতে অনেক বিনিয়োগকারীই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। এমন পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের আগে কিছুটা শেয়ার বিক্রির চাপ থাকে। মুনাফা না করতে পারলেও অনেকেই মূল পুঁজি তুলে নেন ঈদের ব্যয় মেটানোর জন্য। তবে এ বছর টানা পতনের কারণে লোকসানে রয়েছেন প্রায় সবাই। ফলে মুনাফা বা মূল পুঁজি তুলতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, রোজার ঈদের আগেও পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে।

রোজার ঈদের পর দু-একদিন বাজার ভালো গেলেও দেড় মাসের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। পুঁজিবাজারে যখন মন্দা চলছে, সেই সময় প্রস্তাবিত বাজেটে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছে।

এছাড়া আর কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। পুঁজিবাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর জন্য এবারের ঈদ মাটি হয়ে যাবে। কারণ বাজারে যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে অনেকেই বিনিয়োগ করা পুঁজির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মতো হারিয়ে ফেলেছেন। বিনিয়োগকারীরা এখন চোখে সরিষার ফুল দেখছেন। সবারই দিশেহারা অবস্থা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায়ের দেখা মিলছে না।

সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটেই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ৫০ লাখ টাকার ওপরে ক্যাপিটাল গেইন করলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে। আর ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স দিতে হবে না।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন আরোপ করা হতে পারে, এমন গুঞ্জন পুঁজিবাজারে আগেই ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ না করার দাবি জানানো হয়। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি অর্থমন্ত্রী।

ফলে প্রস্তাবিত বাজেটের পর প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। এর পর দ্বিতীয় কার্যদিবনে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিলের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থা বিরাজ করছে। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ৮৯ পয়েন্ট ছিল।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মতিন মিয়া বলেন, পুঁজিবাজারের এমন চিত্র ৩০ বছরের ইতিহাসে দেখিনি। দিন যতই যাচ্ছে পোটফোলিও ততই খারাপ হচ্ছে। যেই শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি, সেটাতেই ধরা খেয়েছি। রোজার ঈদের পর থেকে গত দুই মাসে বিনিয়োগ করা পুঁজি ৭০ শতাংশ হারিয়েছি। এভাবে পুঁজিবাজার চলতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।