শিল্পকলার নতুন ডিজি স্বৈরাচারের দোসর, তার নিয়োগ কেন হলো: রিজভী
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) জামিল আহমেদকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসর আখ্যা দিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে তার নিয়োগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ আবার বলেছে শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ করা দরকার দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য।
কেন? হিটলারের সঙ্গে কি সংলাপ করা যায়? আবার কি আমরা ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানকে ডেকে নিয়ে এসে সংলাপ করব? এই সব বলা লোক সৈয়দ জামিল আহমেদকে শিল্পকলা একাডেমির ডিজি বানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে কেন?
রিজভী বলেন, তিনি কয়েকদিন আগে বলেছেন পালিয়ে থাকা রামেন্দ্র মজুমদার, নাসির উদ্দিন বাচ্চু এদেরকে নিয়ে আসা দরকার। আমার প্রশ্ন তারা পালিয়েছে কেন? ওরা আত্মগোপনে আছে কেন? আমরা তো দেখছি যারা ভদ্র আওয়ামী লীগার তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত তিনটি পরিবারের মাঝে তারেক রহমানের অর্থ সহায়তা দিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নানা কথা বলছেন। আপনি সৈয়দ জামিল আহমেদ এই সমস্ত বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে কীসের রাষ্ট্র তৈরি করতে চান। আবার আপনি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চান? আপনি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনলে হয়তো আপনাদের আবার সুবিধা হবে। কিন্তু গোটা জাতি আবার ক্রীতদাস হয়ে যাবে। বন্দি হয়ে যাবে শেখ হাসিনার কাছে এবং তার প্রভু ভারতের কাছে।
বর্তমান সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের দুর্বলতার সুযোগে কিংবা আপনাদের ভালো মানসিকতার সুযোগে ওই পরাজিত স্বৈরাচারের লোকেরা যেন কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠা না পায়। হিটলারের যারা সহযোগী ছিল তাদেরকে কি পরবর্তী সরকার কোনো জায়গায় দিয়েছিল? এটাতো আমরা কখনোই শুনি নাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গতকাল ২৫ জন ডিসি দিয়েছেন। এই ২৫ জন ডিসির সবগুলোই ছিল ছাত্রলীগের। এরা এখন ডিসি হয়ে গেছে। এরা তো গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করবে না। আজকে যারা আয়না ঘর করেছে, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডকে যারা ধামাচাপা দিয়েছে, যারা একের পর এক দুষ্কর্ম করেছে তাদেরকেই তো এরা প্রশ্রয় দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সকলের আস্থা আছে।
ড. ইউনূস সকলের শ্রদ্ধাভাজন কিন্তু উনাদেরকে দেখতে হবে এই পরাজিত ভয়ংকর স্বৈরশক্তির দোসররা যদি মাথাচাড়া দেয় তাহলে তো আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাস্তা দিয়ে কোনো সুন্দরী নারী হেঁটে গেলে যাকে পছন্দ হয় তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শিশু-কিশোর-ছাত্রছাত্রীদের রক্ত নিতে যে মহিলাটি দ্বিধা করেনি, শ্রমজীবী-রিকশাচালকদের হত্যা করতে যার হৃদয় কাঁপেনি তারা হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা বিদেশি কোনো শত্রু নয়। দেশেরই মানুষ। ইমন, বাবু, নুরু ব্যাপারীরা এই দেশের মানুষ। আপনি ১৬ বছর অবৈধভাবে অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে অবৈধ ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন, আপনার নির্বাচন যে পাতানো ছিল, একতরফা ছিল, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনি ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। এটা সারা বিশ্ববাসী জানে।
রিজভী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোকেরা যে লুটপাট করেছে তিনি প্রকারান্তরে তাদেরকে সমর্থন দিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেল ফ্লাইওভার করে তারা অনেক টাকা পাচার করেছে সেটা তো সত্য হয়েছে। তার পিওন ৪০০ কোটি টাকার মালিক তিনি নিজে মুখে বলেছেন। তার লুটপাটের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে তাদেরকে হয় গুম করা হয়েছে না হয় আয়না ঘরে রাখা হয়েছে।
আয়না ঘরটা কি তার হদিস কেউ জানে না কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা তার বিরোধীদেরকে নিশ্বাস প্রশ্বাস ছাড়া একটি কালো জায়গায় অন্ধকার ঘর যেখানে বন্দি করে রাখা হয়। এটা আমার কথা নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার একটি রিপোর্ট থেকে বলা হয়েছিল। এসময় রিজভী আন্দোলনে প্রাণ হারানো ইমন, নুরু বেপারী এবং বাবুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদল নেতা তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।