শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) শুরুতে বড় বিতর্কে পড়েছে। বির্তক যেন বিএসইসির পিছু ছাড়ছে না। ফলে নিজ ক্ষমতায় স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে বিএসইসি। মুলত দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আবারও ভুল করলো কমিশন। এ বিষয়ে তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে কমিশন। কিন্তু চতুর্থবারেও নিয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। সেখানেও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশন সদস্যদের বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে বাজারে কমিশনের অদক্ষতা ফুটে উঠছে। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একই ভুল বারবার করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি গত ১৫ বছরে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্ট

দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের পর এই খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আগের চারজন কমিশনারের মধ্যে তিনজনকে বাদ দিয়ে পুনর্গঠন হয় কমিশন। নতুন চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকছুদ, অন্যান্য কমিশনারদের মধ্যে: মো. আলী আকবর এবং ফারজানা লালারুখ। এছাড়াও আগের কমিশনার হিসাবে রয়েছেন মো. মোহসিন চৌধুরী। নতুন কমিশন গঠনের পর মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি কমিশনের দুর্বলতা ও অদক্ষতা সামনে আসে।

এ বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে কমিশনের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। কারণ একই ভুল একবার করা যায়। কিন্তু বারবার করলে মানুষ প্রশ্ন করবে, বিষয়টি উনারা নিজেরা বোঝেন কিনা। আবার এভাবে ভুল হতে থাকলে সামনে কীভাবে চলবেন। ফলে পুরো বিষয়টি বাজারের আস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে বিদ্যমান আইনকানুনের মধ্য থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এখানে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তবে এসব বিষয়ে কমিশনের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পর্ষদে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে ৩ জনের ক্ষেত্রেই আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এরা হলেন: ডিএসইর সাবেক এমডি মাজেদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তবে বিতর্ক শুরু হলে দুজন নিজ থেকেই সরে দাঁড়ান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এ দুজনের স্থানে নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা হলেন-হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এএফ নেসারউদ্দিন ও জেডএন কনসালট্যান্টের সিইও সৈয়দা জাকেরিন বখত নাসির।

কিন্তু এখানেও আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তারাও যোগ দেননি। পরে নিয়োগ দেওয়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানকে। এই সিদ্ধান্তেও আইন লঙ্ঘন করেছে বিএসইসি। কারণ স্টক ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার ‘কে’ উপধারায় বলা আছে-কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মোমিনুল ইসলাম এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

এছাড়াও ওই আইনের ৫’র ধারার ‘সি’ উপধারায় বলা আছে, গত তিন বছরের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পার্টনার হিসাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্য হবেন না। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা যথেষ্ট শেয়ারধারীও স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। আইনের ‘(ডি)’ উপধারায় বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরের মধ্যে কেউ স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোনো সম্মানি নিয়ে থাকলে তিনিও স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না। আগে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এই ধারা বিবেচনায় তারা কাজে যোগদান করেনি।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুসারে স্টক পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ৬ জন, সেনাবাহিনী মনোনীত ১ জন, ট্রেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ৪ জন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ১ জন এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে পর্ষদে পরিচালক থাকেন। বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে বিতর্ক চলছে।