পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ রাশেদ কমিশন, নতুন পুঁজি উধাও ৪০ শতাংশ
শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া নতুন চেয়ারম্যানের অনৈতিক হস্তক্ষেপে অস্থির দেশের পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি তুলেছেন। এ কমিশন পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সে আশা গত এক মাসে ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে। মুলত গত এক মাসে অধিকাংশ শেয়ারের নতুন করে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পুঁজিবাজারের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে। তবুও আশার আলো দেখা যায়নি পুঁজিবাজার। বরং নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। মুলত এ পুঁজিবাজার পতনের পেছনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বারবার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন, ভুল সিদ্ধান্ত ও অনৈতিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কার এবং পুঁজিবাজারে আস্থা পুনরুদ্ধার করা ছিল অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাসে সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজারে কিছুটা আশার আলো দেখা দিলেও পুঁজিবাজারের চিত্র আগের চেয়ে আরও ভঙ্গুর অবস্থায়। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা ও আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে কোন বিনিয়োগকারী বেশী পরিমাণ শেয়ার কিনলেই বিএসইসি থেকে ফোন করে কারণ জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়া দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ নিয়ে ডিএসইর সাথে চলছে এক ধরণের দূরত্ব। আইন ব্যতয় করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলামকে। নিজ ক্ষমতায় এক্সচেঞ্জটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে চারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। একই সাথে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের বিএসইসিতে এনে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিএসইসি। এটিও পুঁজিবাজারে নতুন ইতিহাস। এর আগে কখনো এই জাতীয় ঘটনা ঘটেনি। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব অবমূল্যায়ন করায় কমিশনের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্বের তৈরি হয়েছে বাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মজিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করে বর্তমান কমিশন একের পর এক তদন্ত কমিটি করে বিনিয়োগকারীদের সাথে তামাশা করছে। দিন যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। অথচ ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে একটা স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। সব সেক্টর থেকেই স্বৈরাচার দূর করে যোগ্যদের নেতৃত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। কারণ এখানে যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের অনেকের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে। ফলে এই কমিশন দিয়ে কী ভাবে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে পারবে এই প্রশ্ন থেকেই যায়।
স্টক বন্ডের বিনিয়োগকারী শাকিল মাহমুদ বলেন, এটা পুঁজিবাজার, না পুঁজি হারানোর বাজার। এটা বুঝা মুশকিল। কারণ গত এক মাসে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নতুন করে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টক এক্সচেঞ্জে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের লঙ্ঘন করেন, সে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? তাও এক ভুল একবার করলে মানা যায়। একই ভুল বারবার করার দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় কমিশনের সক্ষমতা কতটুকু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নতুন কমিশনের হুটহাট সিদ্ধান্তে আস্থা সংকটে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। তিনি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করে একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন করে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করেছেন। এছাড়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের পর আমরা যেভাবে বিএসইসির সংস্কার চেয়েছিলাম, তা মোটেও হয়নি।
বিএসইসিতে পুঁজিবাজার বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নীতিনির্ধারক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন কমিশনে যারা নীতিনির্ধারক পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নিজেদেরকে এতটাই জ্ঞানী ভাবছেন যে, আমাদের সঙ্গে কথা বলা বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এছাড়া পুঁজিবাজার ইস্যুতে বিএসইসি চেয়ারম্যান দ্রুত বাজার বান্ধব সিদ্ধান্ত না নিলে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করছেন তিনি।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৯৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৬৪ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭২ টির, দর কমেছে ২৯৯ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫ টির। ডিএসইতে ৫৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৯৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৮ টির এবং ১৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।