দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের গঠনের জন্য সব কক্ষে সঙ্গে বসা শেষ হয়নি। মালিক, সাংবাদিক, সম্পাদকসহ অন্য সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরামর্শ নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসা হয়েছে। আজকের এই আলোচনাটাও এটা একধরনের ইনসাইট দেবে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে বসে তাদের একটা পরামর্শ নিয়ে সংস্কার কমিশনটা ঘোষণা করতে পারবো। সোমবার (৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘সংবাদমাধ্যম সংস্কার: কেন? কীভাবে?’ শীর্ষক একটি মুক্ত আলোচনায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সব সময় সম্পাদক বা মালিকপক্ষের সঙ্গে বসা হচ্ছে কিন্তু যারা মাঠে কাজ করেন, তাদের ভয়েজ আমাদের কাছে আসে না। এই অনুষ্ঠান সেই দূরত্ব দূর করতে ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চেষ্টাকরবো।

তিনি বলেন, আমরা জানি যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা আইন-কানুন ও বিধিনিষেধ থাকে। সাংবাদিকতাকে একধরনের আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা থাকে। অর্থনৈতিকভাবে গণমাধ্যমকে নানা ধরনের বাধা দেওয়া হয়। সাংবাদিকতাকে যদি পেশাদারত্বের জায়গা থেকে চিন্তা করি, তাহলে সে ধরনের চর্চা আমাদের দেশে অনুপস্থিত। আমাদের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি গড়ে ওঠেনি।

খুব অল্প সময়ের দায়িত্বের অভিজ্ঞতায জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা নিয়ে আমি যেটি বুঝেছি, সেটি হচ্ছে এখানে নানামুখী স্টেক হোল্ডার ও পরস্পরবিরোধী পক্ষ রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে এবং ঐকমত্যে আসতে হবে। যখন ওয়েজ বোর্ডের কথা আসে, তখন সম্পাদক ও মালিকরা ওয়েজ বোর্ডের বিরোধিতা করেন। আবার অনেক সময় বিভিন্ন হাউজ থেকে বেতন পরিশোধ করা হয় না। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা এগুলো নিয়ে অভিযোগ করেন।

বেতনের বিষয়টি সুরাহা হওয়া উচিত মনে করে তিনি বলেন, এটি (সাংবাদিকতা) যদি একটি পেশা হয়, তাহলে সে পেশাকে মর্যাদা দিতে হবে। এখানে দাসসুলভ আচরণ করার কোনও সুযোগ নেই। যেসব সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে, তাদের সাংবাদিকদের প্রকৃত স্বার্থে কাজ করা উচিত। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, আমরা সেগুলোও বিবেচনা করবো। সাংবাদিকতার যে বহুমুখী স্টেক হোল্ডার আছেন, তাদের নিয়ে আমাদের একটা ঐকমত্যে যেতে হবে।
আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেখেছি আন্দোলনে সাংবাদিকরা কী ধরনের কাজ করেছে আবার যারা গণমাধ্যমের স্টেকহোল্ডার আছেন, তারা কী করেছেন।

সেখানে মালিকদের একধরনের ভূমিকা ছিল। সেটা আমাদের জন্য একটা কেস স্টাডি। এটা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি অনেক সাংবাদিক আমাদের কাছ থেকে নিউজ নিতেন কিন্তু সেটি প্রকাশ হতো না। তখন আমরা শুনেছি একটা হাউস পলিসি আছে, কোনটি যাবে আর কোনটি যাবে না। আবার হাউসের ওপরে হাউস আছে কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না।তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তাহলে এই দায়িত্বটা নেবে কে? যদি দায়িত্বশীলদের বলা হয়, তখন তারা বলে সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিএফআই দিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আমরা সাংবাদিকতাকে বলি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু এই স্তম্ভের খেয়াল তো আমরা করিনি। আমাদের বিচার বিভাগ, প্রশাসন সেগুলোর দিকে মনোযোগ ছিল। কিন্তু আমরা এমন এক ট্রেন যে সবার দিকে লাইট ফেলি কিন্তু নিজের দিকে আমাদের লাইটটা পড়ে না। আমরা নিজেরা নিজেদের অন্ধকারে রেখেছিলাম। আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর বলি কিন্তু আগে নিজেদের নিয়ে এভাবে কথা বলেছি?
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।

সাংবাদিকরা এটা পাহারা দেওয়ার জন্য কী ভূমিকা পালন করবো? আমাদের বিগ পাওয়ারহুড এবং বিগ মিডিয়া এটা আপনাকে ছোট করতেই হবে। একজন মালিকের একটার বেশি মিডিয়া থাকতে পারবে না। তারপর কালোটাকার মালিকদের মিডিয়ায় আসা কীভাবে বন্ধ করা যায়? আপনি মিডিয়া বন্ধ না করেন, তাকে কালোটাকার জন্য ধরেন। তার যে অর্থনৈতিক অবদান, সেখানে তাকে ধরেন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ যেন না ওঠে।