দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানায় বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ঠিকানা প্রধান সম্পাদক খালেদ মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় জ্যাকসন হাইটস থেকে প্রচারিত বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষত রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার পরিবর্তন, আইএমএফের শর্ত পূরণ, অর্থপাচার রোধ, ইসলামী ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ, রিজার্ভ চুরি, নগদের পরিচালনা, এবং বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন গভর্নর।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভের ব্যবহার ও স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের অনাদায়ী দায় পরিশোধ, আমদানি সহজীকরণ, এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার কারণে রিজার্ভের পরিমাণ প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। তবে, রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে যথেষ্ট এবং তা চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম।

তিনি রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি না করার দৃঢ়তা ব্যক্ত করেন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থ প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানান। গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানে শেয়ার থাকা উচিত নয়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ কমানোর পক্ষে মত দেন।

আইএমএফের শর্ত পূরণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এক্সচেঞ্জ রেট বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য রয়েছে। তিনি রিজার্ভের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

অর্থ পাচার রোধে সরকার ছয় মাসের মধ্যে বড় ধরণের পদক্ষেপ নেবে বলে জানান গভর্নর। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নেওয়া হবে এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তিনি বলেন, বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।

নগদের পরিচালনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগদ বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এবং এটিকে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিনিয়োগ সম্মেলন প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির কথা বলেন।

রাজনৈতিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার গতিশীলতার উপর নির্বাচনের সময় নির্ভর করবে। তিনি ড. ইউনুসের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।

গভর্নর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভের স্থিতিশীলতা রক্ষা, এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।