রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ না করলে ঘুরবে না পুঁজিবাজার: সূচক উধাও ৪২ পয়েন্ট

শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ বেড়েই চলেছে। টানা দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমতে কমতে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। পুঁজিবাজারের এই সংকট দূর না করে বিশ্বের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অফিসারদের নিয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার মো. আলী আকবর।
ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের কিছুটা আশার আলো দেখালেও সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে হতাশ করেছে। মুলত সূচকের পতনের এমন নেপথ্যে কারণ রাশেদ মাকসুদ কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা।
এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগের কোন খবর না আশায় বিনিয়োগকারীরা ফের হতাশ হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যায়গায় ঠেকেছে যে ‘রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ না করলে ঘুরবে না পুঁজিবাজার’।
এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা নেই বিনিয়োগকারীরা। কারণ তিনি গত ৮ মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা না ফিরিয়ে একের পর এক তদন্ত কমিটি ও সংস্কারের নামে বাজারকে অস্থিতিশীল করছেন। এছাড়া দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের অবস্থা ততই ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কী ভাবে পুঁজি টিকিয়ে রাখবেন তা নিয়ে হা হুতাশ বাড়ছে। ফলে রাশেদ মাকসুদ কশিনের পদত্যাগই পুঁজিবাজারের একমাত্র সুরাহা বলে মনে করছেন একাধিক বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) প্রেসিডেন্ট এসএম ইকবাল হোসেন বলেন, রাশেদ মাকসুদ কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। বর্তমান পুঁজিবাজার ইস্যুতে রাশেদ মাকসুদ কমিশনের পদত্যাগের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়া তিনি পুঁজিবাজারে আগুণ লাগিয়ে যাচ্ছেন বিদেশ ভ্রমণে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হলেও পুঁজিবাজার ভাল করার তার কোন পরিকল্পনা নেই। তাই রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ করলে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ করছেন এমন খবরে সূচকের বড় দরপতন থেকে ২২ পয়েন্ট সূচকের উত্থান হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীরা যখন জানতে পারছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন না ফলে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ৪২ পয়েন্টের দরপতন হয়েছে। এর আগে গত বুধবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে মতিঝিল পাড়া। বিনিয়োগকারীদের এখন মূল দাবিই মাকসুদের পদত্যাগ। যার পদত্যাগেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস বিনিয়োগকারীদের।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, পুঁজিবাজার টানা ৯ কার্যদিবস ধরে দরপতনের মধ্যে লেনদেন শেষ হলেও সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের খবরে সূচকের বড় পতন থেকে ২২ পয়েন্ট উত্থান ঘটে। মুলত বর্তমান কমিশনের উপর কারোরই আস্থা নেই। এই কমিশন পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। এখন কেউই রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে চাচ্ছেন না। এই কমিশনের পদত্যাগে বাজার ঘুরে দাড়ানো সম্ভব।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৪ টির, দর কমেছে ২৪৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৯ টির। ডিএসইতে ৪৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২০ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১২টির এবং ২৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।