আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ মন্দার পর অবশেষে ঈদ পরবর্তী সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে গত কয়েক কার্যদিবস সূচকের টানা উত্থানে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ টানা দরপতনে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি বাজারের এ উত্থানের ধারা অব্যাগত থাকলে বাজারবিমুখ বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবে। এদিন সূচক সাথে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসে ধারাবাহিক পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেন। এই সময়ে ২১ কার্যদিবস লেনদেনে মাত্র সাত কার্যদিবস সূচক বেড়েছে। তবে চলতি জুনে এরই মধ্যে ছয় কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে পাঁচ কার্যদিবই সূচক বেড়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস সূচক বেড়েছে ১৬৯ পয়েন্ট। এর মধ্যে বাজেট ঘোষণার পরের দিন ৩ জুন সূচক কমেছিল ২৪ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুনের শুরুতে ২০২৫-২৬ মেয়াদের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ করা গেছে, যার ফলে জুনের শুরুতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের নতুন শেয়ার ক্রয়ের বেশি মনোযোগী দেখা যাচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি রাখা হয়েছে, তা হচ্ছে: নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও নন-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করের পার্থক্য বাড়ানো। এটি চূড়ান্ত হলে আশা করা যায় আগামীতে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে।

তিনি বলেন, এ ছাড়া বাজেটে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের সঙ্গে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে, যা পুঁজিবাজারকে আরও সম্প্রসারিত করবে।

গত ২ জুন প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য চারটি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে আছে মাল্টিন্যাশনাল (বহুজাতিক) কোম্পানিগুলোতে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ প্রদান, বাজারে কারসাজি রুখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা এবং ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড (তালিকাভুক্ত) কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কর প্রদানের শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগের পরিবর্তে কেবল ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড (তালিকাভুক্ত) এবং নন-লিস্টেড (তালিকাভুক্ত নয়) কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত এবং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং বাজেটের ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া লেনদেন বৃদ্ধি এবং সূচকের ধারাবাহিক উত্থান স্থিতিশীল বাজারের আভাস বলে মনে করছেন তিনি। তেমনি গত দুই কার্যদিবস ডিএসইর সূচকের ৭৪ পয়েন্টে উত্থানের ফলে বাজার স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আভাস দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৮৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৮৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩১৫ টির, দর কমেছে ৩৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬ টির। ডিএসইতে ৪১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৬০ কোটি ২ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৪ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ১১৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৩ টির এবং ১৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।