দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস পিএলসি’র বিরুদ্ধে ব্যবসা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি চীনা কোম্পানি ইয়াদিয়া গ্রুপ হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিবেশক হিসেবে ইলেকট্রিক স্কুটার বাজারে আনলেও, তা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করেনি। বিধি অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলে দুই ঘণ্টার মধ্যে তা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়।

অথচ ইয়াদিয়া ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক স্কুটার আনার বিষয়ে দেড় থেকে দুই বছর আগে চুক্তি হলেও তা তখন জানানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ‘সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা ২০২২’–এর বিধি ৬ লঙ্ঘিত হয়েছে।

রানার অটোমোবাইলস জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (ডিসেম্বর ২০২৩) ব্যবসায় ইয়াদিয়া স্কুটার যুক্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটি ছিল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান গণমাধ্যমে জানান, ইলেকট্রিক স্কুটার ব্যবসা যুক্ত হওয়ার তথ্য ডিএসইকে জানানো হয়েছে, তবে কার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তা মনে নেই।

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.জি.এম সাত্তিক আহমেদ শাহ্ গণমাধ্যমে জানান, প্রতিষ্ঠানটি ৪ জুন ২০২৫ তারিখে ইয়াদিয়া স্কুটার ব্যবসায় সংযোজনের তথ্য ডিএসইকে জানালেও চুক্তির সময় তা গোপন করেছে। বিষয়টি কেন জানানো হয়নি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ব্যবসায়িক চুক্তির সময়ই তথ্য জানানো উচিত ছিল। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসইসি টাস্কফোর্স সদস্য মো. আল-আমিন বলেন, কোম্পানিটি যদি তথ্য না দিয়ে থাকে, তবে এটি কমপ্লায়েন্স ভায়োলেশন।

২০১৯ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসা রানার অটোমোবাইলস তখন ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ইস্যু মূল্য ছিল ৬৮ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর নেমে এসেছে ২৫.৭০ টাকায়, অর্থাৎ ইস্যু মূল্যের চেয়ে ৬২ শতাংশ কম। গত দুই অর্থবছরে কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে লোকসান করেছে। ২০২৩ সালে ৮৮ কোটি ও ২০২৪ সালে ৬ কোটি টাকা লোকসানের পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে যথাক্রমে ৭.৭৫ ও ০.৫৪ টাকা। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশ হয়েছেন।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ কে এম মিজান উর রশীদ চৌধুরী বলেন, রানার ভালো ব্যবসা করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে ইপিএস কম দেখিয়ে শেয়ারদর ধরে রাখছে না, যা তদন্তসাপেক্ষ। ২০২৩ সালে রানার কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি, যদিও ২০২৪ সালে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১১৩.৫৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪৬.৯৩ শতাংশ শেয়ার।