আটটি চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে নতুন সরকার গঠন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আটটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে দশম জাতীয় সংসদে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।তার কারণ নির্বাচন পর্বর্তী সময়ে যেভাবে সারা দেশে সহিংসতা বেড়ে চলেছে তাতে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
নির্বাচনপূর্ব এবং পরবর্তী সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস হামলা বন্ধ ও হামলাকারীদের কঠোর হস্তে দমনে সরকারকে আন্তরিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালত ইতোমধ্যেই কাজের অনুকূল পরিবেশ হারিয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে সমৃদ্ধি ও সফলতা অর্জনের জন্য সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে কাজের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে কর্মজীবী মানুষের কাছে সরকার গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
অন্য চ্যালেঞ্চগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের টার্গেট করে পরিচালিত সহিংসতা বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে এনে উদ্ভূত রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজে বের করা, নতুন বিরোধীদলকে আস্থায় রাখা, পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু এবং দুর্নীতি দমন।
এছাড়া নতুন সরকারের সামনে প্রধান মৌলিক চ্যালেঞ্জ হবে দেশের চলমান সহিংসতা বন্ধ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মনে যে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা।
এক্ষেত্রে সারাদেশে যেসব সন্ত্রাসী সহিংসতা করে বেড়াচ্ছে তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য শুক্রবার কঠোর ভাষায় বলেছেন, কী করে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় তা তার জানা আছে। সরকারের জরুরি ভিত্তিতে আরো কাজটি করতে হবে তা হলো- বিভিন্ন অঞ্চলকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচিত সরকার যদি প্রকৃতপক্ষে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে তারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
চলমান পরিস্থিতির অবসানকল্পে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে আস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপিকে যদি আস্থায় ফেরানো না যায় তাহলে চলমান সংঘাত আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলেও অনেকে মনে করছেন।
অপরদিকে নবনির্বাচিত বিরোধীদলকে আস্থায় রাখতে না পারলে সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। শিক্ষা, অর্থ, উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সব ধরনের কর্মকাণ্ডে বিরোধীদলের সম্পৃক্ততা ঘটলে সরকারের কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে মনে রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম আরেকটি মূল লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি প্রতিরোধ করা। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিগত সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের হলফনামায় ব্যাপক দুর্নীতি ধরা পড়ে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। এক্ষেত্রে নবনির্বাচিত সরকারকে জনআস্থা অর্জনে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই হলফনামা অনুযায়ী সরকারের অনেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে শত গুণ, হাজার গুণ বেশি সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘শপথ নিয়ে সরকার গঠন করা কোনো বড় কাজ নয়। এটা নিয়মতান্ত্রিক বিষয়। বড় কথা হলো, দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এবং দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করে একটি সভ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তাহলে সরকারের চ্যালেঞ্জ স্বার্থক হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে মহাজোট সরকার কাজ করে যাবে।’
সদ্য শপথ নেয়া ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিগত পাঁচ বছর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় গ্রহণ করে। ব্যাপক কাজও হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে কোনো সরকার রেলের উন্নয়ন করেনি। আর মহাজোট সরকার রেলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।’
চীন থেকে ২০টি ডেমু ট্রে, ১২টি রেল ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ১৮শ’কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫টি উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলের আমূল পরিবর্তন ঘটবে এবং যাত্রী সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে।
সদ্য শপথ নেয়া আরেক সংসদ সদস্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এবং সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দায়িত্ব শেষ করবে এ সরকার।’
অপর সদস্য ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের হাতে দেশের স্বাধীরতার পতাকা তুলে দিতে পারি না। স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকার মান রক্ষায় বর্তমান সরকারের নতুন চ্যালেঞ্জ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি দিয়ে দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করবো।’