প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী নিয়ে ফের আলোচনায় পুতুল!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্তরাধিকারী কে হবেন? এমন প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই সন্তান ও ছোট বোন শেখ রেহানার তিন সন্তানই উচ্চ শিক্ষিত। আবার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয়ের অবদানের কথা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন। বেশি সময় বিদেশে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় দেশের জন্য কাজও করেছেন। তবে তিনি ততটা রাজনীতি ঘেষা নন।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ জয়ের কাছ থেকে শেখা। জয়ই আমাকে এ ব্যাপারে সব রকম পরামর্শ দিয়েছিলো।’ তবে সম্প্রতি দেশে বিদেশে সার্বক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হতে দেখা যায় তারই কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। অনেকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী তাকে হাতে কলমে রাজনীতির অনেক বিষয় শেখাচ্ছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আলোচনাও করছেন। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়া তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। তিনি বেশ ভালো বক্তাও। বিশেষ করে পুতুল একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। সারাবিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী। সারাবিশ্বে অটিজম বিষয়ে মানুষকে সংবেদনশীল সচেতন করার ক্ষেত্রে তিনি একজন রোল মডেল।
শেখ হাসিনা যখন লন্ডনে চোখের অপারেশনের জন্য গিয়েছিলেন, সেই সময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এবার জাতিসংঘের সাধারণতম অধিবেশনেও দেখা যাচ্ছে পুতুলকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং ফটোসেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও। এছাড়া বিল গেটসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী যদিও জাতিসংঘের সাধারণতম অধিবেশনে সজীব ওয়াজেদ জয়ও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সার্বক্ষণিকভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা গেছে পুতুলকে।
অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, একাধিক সাইড ইভেন্টে পুতুল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে সাইড ইভেন্টটি হচ্ছে, সেখানে পুতুলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে সাইড ইভেন্টেও পুতুল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামীর নাম খন্দকার মাশরুর হোসেন। তার তিন কন্যা এবং এক ছেলে। স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ফরিদপুর জেলা থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
পুতুল ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুতুলকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।
তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন। প্রসঙ্গত, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নেতৃত্ব দেয়ার মতো সকল গুন তার রয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকেই বলছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যদি আওয়ামী লীগে সক্রিয় হয়ে মানুষের পাশে থাকেন তাহলে তিনিও হতে পারেন দলটির কাণ্ডারি। সেটা সময়ই বলে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই পুতুলের মতো মেধাবীকে মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে টানবেন। এখন অনেকেই আলোচনা প্রশ্ন করছেন, বিনয়ী, সংযত এবং উচ্চশিক্ষিত মেধাবী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে কি গড়ে তুলছেন শেখ হাসিনা?