কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগে গ্রুপিং kustia_dist_awmi_officeও কোন্দল চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সঙ্কট আরও ঘনিভূত হবে বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া-১ ও কুষ্টিয়া-৪ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভক্ত হয়ে দুই অংশের পক্ষ নিচ্ছে।

পরিস্থিতি সংঘর্ষের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দলীয় কর্মীরা। রেজাউল হক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার তার সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

আফাজ উদ্দিন আহমেদের সমর্থকদের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘরে ভাংচুর চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।নানা কারনে জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপিং ও কোন্দল গত ৮ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে।

এর আগে বারবার উদ্যোগ নিয়ে কোন্দল মেটানো যায়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গ্রুপিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতা বলেন, এতদিন আধিপত্য নিয়ে গ্রুপিং থাকলেও নির্বাচন নিয়ে নতুন করে গ্রুপিং আরো তীব্র হবে। আগামী দিনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি কঠিন ও অনেকের জন্য বিপদজনক হয়ে পড়বে।

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসনে বর্তমান এমপি আফাজ উদ্দিনকে ফের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ চরম আপত্তি তোলে। এ মনোনয়নের বিরোধিতা করে ওই অংশের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে।

শেষ পর্যন্ত আফাজকে পরাজিত করে তিনি জয়লাভ করেন। রেজাউল হক সমর্থিত নেতারা আফাজ উদ্দিন ও তার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন। দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ শরীফ উদ্দিন রিমন জানান, আফাজ উদ্দিন বিতর্কিত নেতা। তাকে মনোনয়ন দেয়ায় দলের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামে।

রেজাউল হকের বিরুদ্ধেও স্থানীয় নেতাদের নানা অভিযোগ রয়েছে। নেতারা বলেন, রেজাউল হক মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন। তার এক ভাই সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি মাদক স্পট থেকে নিয়মিত মাসোহারা পান তিনি। এ রকম একজন নেতা সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর মাদকের ভয়াবহতা আরো বাড়তে পারে বলে এলাকার লোকজন মনে করছে। এছাড়া রেজাউল এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার অনুগতরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
আফাজ উদ্দিন সমর্থিত এক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তার চরম বিরোধ রয়েছে। ওই নেতা আফাজ উদ্দিনকে যাতে মনোনয়ন না দেয়া হয় সেজন্য সব রকম চেষ্টা চালান। ব্যর্থ হয়ে আফাজ উদ্দিনের বিপক্ষে তার অনুগত নেতা রেজাউলকে স্বতন্ত্রপ্রার্র্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। এখন আফাজ উদ্দিনকে রাজনৈতিক ভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন।

আফাজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে জানান, আমাকে যারা বোমা মেরে হত্যা করতে চেয়েছিল তারায় ফের ষড়যন্ত্রে মেতেছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারনো হয়েছে। এর পিছনে শীর্ষ এক নেতা কলকাঠি নাড়ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। যে কোন সময় সংঘর্ষ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কুষ্টিয়া-৩ আসন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলী বলেন, দলে কোন গ্রুপিং নেই। দীর্ঘদিন কাউন্সিল না হওয়ায় কিছুটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। অচিরেই তা কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি। রউফ প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় কোন নেতা-কর্মী তার পক্ষে কাজ করেনি বলে স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে, নির্বাচন নিয়ে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে দুই উপজেলার নেতাদের মধ্যে বিভেদ বেড়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আব্দুর রউফকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর অনেক নেতা এতে আপত্তি জানান। আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে তার পক্ষে মাঠে নামেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, রউফ মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতা সদর খানকে প্রার্থী করেন। সদর খানের পক্ষে কাজ করতে সবাইকে নির্দেশ দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত রউফ বিজয়ী হন।

নব-নির্বাচিত এমপি আবদুর রউফের সঙ্গে কথা হলে বলেন, অনেক নেতা আমার পক্ষে কাজ করেনি এটা ঠিক, কিন্তু লাভ হয়নি। একটি দুষ্টচক্র নানাভাবে বিরোধিতা করেছে। জনগন আমার সঙ্গে ছিল বলেই জয়লাভ করেছি। সবাইকে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

তিনি সদর উদ্দিন খান, মান্নান খান ও শামসুজ্জামান অরুনের নাম উল্লেখ করে বলেন, এরা অটোমেটিক বহিস্কার হয়ে যাবে। নেত্রী আমাকে নিজে মনোনয়ন দিয়েছেন। নেত্রীর কাছে ওয়াদা করার পরও সদর খান ভোট করেছে। এতে আমার কোন ক্ষতি হয়নি।