tribunal-pic_NATUNSOMOY.COM20151130072840নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলার যুক্তিতর্ক আগামী ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বহুল আলোচিত এ মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এ দিন ধার্য করেছেন পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

আজ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করেন মামলার অন্যতম আসামী সাঈদ এইচ চৌধুরী। এসময় তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান, মামলায় আনীত অভিযোগের সঙ্গে তিনি জড়িত নন এবং কোনো অপরাধ করেননি। সততার সঙ্গে ব্যবস্যায় পরিচালনা করেছেন। তার সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরা করেন বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান। জেরা শেষে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ।

এর আগে ৮ মার্চ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এম এ রউফ চৌধুরীর ও সাঈদ এইচ চৌধুরী। ওইদিন নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য প্রদান করে এম এ রউফ চৌধুরীও ট্রাইব্যুনালকে বলেছিলেন, মামলা সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তৎকালীন সময়ে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো ধরনের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বক্তব্য শেষে বিএসইসি’র প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান ওইদিন তাকেও জেরা করেছিলেন। অপর আসামী সাঈদ এইচ চৌধুরীর সাফাই সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ২১ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সাঈদ এইচ চৌধুরীর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাকে জেরা শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এ মামলার অপর দুই আসামী মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচার কাজ উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। ওই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২ মে।

বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মো. মাসুদ রানা খান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, আজ (গতকাল) সাঈদ এইচ চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাকে জেরা করা হয়েছে। মহামান্য ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের যুক্তিকর্ত উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাটির বিচার কাজ চালিয়ে নিতে আসামি এম এ রউফ চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম খান ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন। একই সঙ্গে তাতে সমর্থন করেন আরেক আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরী আইনজীবী আলহাজ্ব মো. বোরহান উদ্দিন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এ মামলার চার সাক্ষীর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন ও বিএসইসি’র সহকারী পরিচালক এনামুল হককে জেরা করেন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা। আর ১ মার্চ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার অন্যতম সাক্ষী বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মনিরউদ্দিন আহমেদকে জেরার মধ্য দিয়ে বাদী বা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওইদিন আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৮ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

অন্যদিকে অপর দুই আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদার ৮ জানুয়ারি তাদের উচ্চ আদালতের বর্ধিত স্থগিতাদেশের কপি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। গত বছরের ২ নভেম্বর শুরু হওয়া বর্ধিত ৬ মাসের ওই স্থগিতাদেশ চলতি বছরের ২ মে শেষ হবে। আর স্থগিতাদেশ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার কাজ বন্ধ থাকবে। এর আগেও আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ এপ্রিল এ দুই আসামীর বিচার কাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এ সময় ১ নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এ সব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর তদন্ত প্রতিবেদনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২১ ধারা মেনে শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর মামলাটিতে বাদী হন কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশিদ খান। মামলায় প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন চেয়ারম্যান (বর্তমানে র‌্যাংগস গ্রুপের চেয়ারম্যান) এম এ রউফ চৌধুরী, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান, তৎকালীন পরিচালক আনু জাগিরদার ও (বর্তমানে এইচআরসি গ্রুপ ও বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান) সাঈদ এইচ চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ২৬ জুলাই এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যার মামলা নং-২/২০১৫। আর বাদীসহ এ মামলায় সাক্ষ্য দেন ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর, তদন্ত কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এটিএম জহুরুল হক, বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মনিরউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক জহিরুল হক।