regent-texদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অর্থ হাতে পাওয়ার প্রায় ২১ মাস পর কারখানার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের (বিএমআরই) জন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ঋণপত্র বা এলসি খুলেছে। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও চীন থেকে ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানি করবে বলে গত সপ্তাহে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায় কোম্পানিটি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি বছরের অক্টোবরেই রিজেন্ট টেক্সটাইলের আইপিও তহবিল ব্যবহারের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। অর্থাত্ মাত্র ৩৮ দিনের মধ্যে কোম্পানিটিকে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে কিংবা দ্বিতীয় দফায় সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএমআরই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকার মধ্যে যন্ত্রপাতি বাবদ ৫৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ের পরও আরো ২৪ কোটি ৭৯ লাখ ৮১ হাজার ৭২০ টাকা অবশিষ্ট থাকবে তাদের হাতে।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) অঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, আইপিও তহবিল ব্যবহারের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে একটি পর্ষদ সভা হবে, যেখানে পরিচালকরা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তখন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এজন্য বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও (বিএসইসি) অনুমোদন নেয়ার একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের আইপিও তহবিল ব্যয়-সংক্রান্ত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আইপিও তহবিলের ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে কোম্পানি।

বাকি রয়েছে ১১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ১৬৪ টাকা বা ৯৫ দশমিক ৭২ শতাংশ অর্থ। এর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত বিএমআরই প্রকল্পে মোট বরাদ্দের মাত্র ১ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৯০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৮ টাকা এবং নতুন তৈরি পোশাক প্রকল্পে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ১ কোটি ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮২ টাকা ব্যয় হয়েছে। এদিকে আইপিওর খরচ হিসেবে নির্ধারিত অর্থের ৯৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ব্যয় করেছে কোম্পানিটি।

জানা যায়, কারখানার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন (বিএমআরই) এবং নতুন তৈরি পোশাক প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের শেষার্ধে পুঁজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর আইপিওর অর্থ ব্যবহারের অনুমতি পায় কোম্পানিটি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বিএমআরই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫২০ টাকা আইপিও তহবিল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে অর্থাত্ ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল।

আর নতুন তৈরি পোশাক প্রকল্পে ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৯৬২ টাকা ১৮ মাসের মধ্যে অর্থাত্ ২০১৭ সালের ১৯ জুনের মধ্যে ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। এর বাইরে আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ হিসেবে ২ কোটি ৬৮ লাখ ১৬ হাজার ৫১৮ টাকা ব্যয় করার কথা।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আইপিওর অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা বাড়াতে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নেয় কোম্পানিটি।

সংশোধিত সময়সীমা অনুসারে, বিএমআরই প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা ১০ মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। আর নতুন তৈরি পোশাক প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের সময়সীমা চার মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থারও অনুমোদন নেয় তারা।

নির্ধারিত সময়ে আইপিও তহবিল ব্যয়ে ব্যর্থ হলেও অব্যবহূত অর্থের আমানত হিসাব থেকে সুদ পেয়েছে কোম্পানি। সুদ আয়ের প্রভাবে তাদের মুনাফা বেড়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা ছিল।

এফডিআরে থাকা এ অর্থের বিপরীতে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা সুদ আয় হয়েছে কোম্পানিটির। হিসাব বছরের প্রথম সে ৯ মাসে পণ্য বিক্রি ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ কমলেও এফডিআরের সুদ তিন প্রান্তিকে রিজেন্ট টেক্সটাইলের নিট মুনাফা ২৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বাড়িয়েছে।

ডিএসইতে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৭০ পয়সায় রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ১১ টাকা ৪০ পয়সা।