dseফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে আজ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পাওয়ার পর চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম কৌশলগত অংশীদার হিসেবে পেতে চুক্তি করতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশে শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ২০ বছরে দেশে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে হয়নি। এ রকম রেকর্ড খুব কম দেশেরই আছে। আমার বিশ্বাস, যেভাবে চলছি আরও কিছু পরিবর্তন করা গেলে চলতি দশকেই মানে ২০২০ সালের মধ্যেই আমাদের অনেক নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়া পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও এটা কল্যাণ বয়ে আনবে। তাদের যুক্তি চীনা কনসোর্টিয়াম দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হলে তারা মালিকানা পাবে। আর মালিকানা পেলে অবশ্যই তারা এ মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করবে। মার্কেটে যুক্ত নতুন নতুন পণ্য। আসবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইতে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়বে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাদের বিনিয়োগ। যা পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বড় ভ‚মিকা রাখবে। চীনের টেকনোলজি যুক্ত হলে সার্ভিলন্স আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের অভিমত এর ফলে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতার জায়গাটি আরও পরিষ্কার হবে। চীনের পুঁজিবাজারে অসংখ্য বড় বড় বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাদের কিছু অংশ যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে, তবে এ বাজার আরও শক্তিশালী হবে।

এ প্রসঙ্গে রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে। তাদের টেকনোলজিতে সার্ভিলেন্স আরও শক্তিশালী হবে সার্ভিলেন্স। চীনা কনসোর্টিয়াম আসার ফলে মানেজমেন্টের পরিবর্তন আসবে। উন্নত প্রশিক্ষণের ফলে তাদের আরও পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চীনের পুঁজিবাজারে বড় বড় অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে।

তাদের ৫০ জনও যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তবে তা অবশ্যই বাজারের জন্য ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। সব মিলে আন্তজাতিক রূপ পাবে বাজার। কেটে যাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম হয়ত দ্রুত খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারবে না। তবে এটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো। তারা আসায় একই সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজার এবং অর্থনীতি দুটিই উর্বর হবে। তিনি বলেন বাজারে এখন ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। তাই দ্রুত বাজারের চিত্র পাল্টাতে হলে ভালো কোম্পানি নিতে আসতে হবে।

এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৈৗধুরী নুরুল আজম বলেন, তারা আমাদের পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়াতে টেকনোলজিতে বড় পরিবর্তন আসবে। এছাড়া আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগও বাড়বে। বিদেশিরাও এ মার্কেটর প্রতি আকৃষ্ট হবেন। সব মিলে এটা পুঁজিবাজারের কল্যাণ বয়ে আনবে।

ডিএসই মুখপাত্র শফিকুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, সোমবার বিকালে হোটেল লা মেরিডিয়ানে চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ডিএসই চুক্তি হবে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খাইয়ুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করার মাধ্যমে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত ৩ মে চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রস্তাব অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

চীনা এই কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ‘বøকড অ্যাকাউন্টে’ থাকা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৫ শতাংশ বা ৪৫,০৯,৪৪,১২৫টি শেয়ার ২১ টাকা দরে কিনবে; যার মূল্য নয়শ কোটি টাকার বেশি।

পাশাপাশি চীনা এই কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা। চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে পাওয়ায় ডিএসইর জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে বলে মনে করেন কোম্পানিটির সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।

দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে তিনি বলেন, “তাদের আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ডিএসইর যেমন কাজে লাগবে তেমনি তাদের ব্রান্ড ডিএসইকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।”

চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায়ও রয়েছে এই দুই পুঁজিবাজার। সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলার আর শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

শাকিল রিজভী বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে শত বছরে পুরনো স্টক এক্সচেঞ্জ থাকলেও চীনের এ দুটি এক্সচেঞ্জ অপেক্ষাকৃত নতুন। কিন্তু এদের প্রবৃদ্ধির ধারা ব্যাপক। তাই তারা যখন কোনো বাজারের অংশীদার হবে তখন সেই বাজারেরও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে।

চীনের কনসোর্টিয়াম কাজ শুরুর পর ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারী, দৈনিক লেনদেন বাড়বে এবং পণ্যের বহুমূখীকরণ হবে বলে মনে করেন শাকিল রিজভী। কৌশলগত অংশীদার পেতে গত বছরের শেষ দিকে ডিএসই আহবানে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়।

এদের মধ্যে ছিল চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক এর কনসোর্টিয়াম। দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০ ফেব্রুয়ারী চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।

এরপর চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পেতে গত ২২ ফেব্রুয়ারী  নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদন করে ডিএসই। কিন্তু ১৯ মার্চ প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা সংশোধন করতে বলে বিএসইসি। এরপর ৩০ এপ্রিল কোম্পানির সাধারণ সভায় সংশোধিত প্রস্তাবে সায় দেয় ডিএসইর শেয়ার হোল্ডাররা। ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের পর ৩ মে অনুমোদন দেয় বিএসইসি।