dseদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি বছর টানা দরপতনে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দরে পতন হয়েছে। এরমধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যেও শেয়ার দরে উত্থানের রেকর্ড করেছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো। তবে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো যে কেবল শেয়ার দরে উত্থানের রেকর্ড করেছে- তাই নয়, পতনেরও সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভ‚ক্ত ৩৪২টি কোম্পানির মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি বা শেয়ার সংখ্যা ৬০ লাখের নিচে রয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১৯টি। এই ১৯টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টি কোম্পানিরই শেয়ার দরে উত্থানের রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে,২টি কোম্পানির শেয়ার দরে পতনের রেকর্ড হয়েছে।

এরমধ্যে স্বল্প মূলধনী শীর্ষ কোম্পানি মুন্নু স্ট্যাফলার্স আকাশছোঁয়া দর হাকিয়ে শেয়ারবাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে, শেয়ার দরে অস্বাভাবিক পতন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতবাক করে দিয়েছে জেমিনি সী ফুড ও নর্দার্ন জুট। তালিকাভ‚ক্ত ৩৪২টি কোম্পানির মধ্যে পতনের দিক থেকে জেমিনি সী ফুড ও নর্দার্ন জুট সবার উপরে রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে মুন্নু স্ট্যাফলার্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫৮৮ শতাংশ। অন্যদিকে, জেমিনি সী ফুডের শেয়ার দর কমেছে ৩৭৪ শতাংশ এবং নর্দার্ন জুটের শেয়ার দর কমেছে ১৩৫ শতাংশ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি হিসাবে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক দর পতন ঘটিয়ে কোম্পানি ৩টি রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। যদিও জেমিনি সী ফুড ও নর্দার্ন জুট শেয়ারবাজারে শীর্ষ লভ্যাংশ দেয়ার কোম্পানিগুলোর তালিকায় অর্ন্তভ‚ক্ত।

মুন্নু স্ট্যাফলার্স : চলতি বছরে মুন্নু স্ট্যাফলার্সের সর্বনিম্ন দর ছিল ৫০১.৪০ টাকা। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৩,৪৫২.১০ টাকা। এতে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫৮৮ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,গত বছর মুন্নু স্ট্যাফলার্স বিনিয়োগকারেীদের ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। আগের বছর ২০১৬ সালে দিয়েছিল ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৯৫ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৬০ টাকা। সর্বশেষ শেয়ার দর অনুযায়ী কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৮৭৭.৬৫। এটি শেয়ারবাজারে বর্তমানে সর্বোচ্চ পিই রেশিওর কোম্পানি।

জেমিনি সী ফুড : চলতির্ বছরে জেমিনি সী ফুডের সর্বোচ্চ দর ছিল ২০০০ টাকা। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৪২১.৭০ টাকা। এতে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি শেয়ার দর হারিয়েছে ৩৭৪ শত্ংাশ।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর জেমিনি সী ফুড বিনিয়োগকারেীদের ১২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। আগের বছর ২০১৬ সালে দিয়েছিল ২০ শতাংশ নগদ ও ৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২.১৯ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২.৯০ টাকা। সর্বশেষ শেয়ার দর অনুযায়ী কোম্পানিটির পিই রেশিও ১৪৪.৪২।

নর্দার্ন জুট : চলতি বছরে নর্দার্ন জুটের সর্বোচ্চ দর ছিল ৭১৮.৮০ টাকা। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৩০৬.১০ টাকা। এতে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৩৫ শত্ংাশ। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর নর্দার্ন জুট বিনিয়োগকারেীদের ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১০.৩৮ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৪৪ টাকা। তবে কোম্পানিটি লোকসানে থাকলেও এর বড় রিজার্ভ রয়েছে। বর্তমানে এর রিজার্ভ রয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১০.৩৮ টাকা লোকসানে থাকলেও শেয়ারপ্রতি এর রিজার্ভ রয়েছে ৬৫.৮৭ টাকা।

১৯ কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা : মুন্নু স্ট্যাফলার্সের শেয়ার সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার, স্টাইলক্রাপ্টের ৯ লাখ ৯০ হাজার, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের ৯ লাখ ৯৪ হাজার, লিবরা ইনফিউশনের ১২ লাখ ৫২ হাজার, মডার্ন ডাইংয়ের ১৩ লাখ ৬৮ হাজার, সাভার রিফেক্টরিজের ১৩ লাখ ৯৩ হাজার, জুট স্পিনার্সের ১৭ লাখ, রেনউইক যজেনশ্বরের ২০ লাখ, নর্দার্ন জুটের ২১ লাখ ৪৩ হাজার, এ্যাম্বি ফার্মার ২৪ লাখ, সোনালী আঁশের ২৭ লাখ ১২ হাজার, ফার্মা এইডের ৩১ লাখ ২০ হাজার,

জেমিনি সী ফুডের ৩৭ লাখ ১৩ হাজার, বিডি অটোকার্সের ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার, রেকিট বিনকিজারের ৪৭ লাখ ২৫ হাজার, কে এন্ড কিউর ৪৯ লাখ ৩ হাজার, শ্যামপুর সুগারের ৫০ লাখ, আজিজ পাইপের ৫০ লাখ ৯৩ হাজার এবং এপেক্স ফুডের ৫৭ লাখ ৩ হাজার।

১৯ কোম্পানির উত্থান-পতন : মুন্নু স্ট্যাফলার্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫৮৮%, কেএন্ডকিউর ৩০২%, বিডি অটোকার্সের ২২৭%, জুট স্পিনার্সের ১৮২%, আজিজ পাইপের ১৫২%, ফার্মা এইডের ১৪৮%, সাভার রিফেক্টরিজের ১২৭%, লিবরা ইনফিউশনের ১১৪%, শ্যামপুর সুগারের ৯৫%, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের ৮৬%, স্টাইলক্রাপ্টের ৮২%, এ্যাপেক্স ফুডের ৭২%, সোনালী আঁশের ৬৫%, এ্যাম্বি ফার্মার ৫২%, মডার্ন ডাইংয়ের ৫১%, রেনউইক যজেনশ্বরের ৪০% এবং রেকিট বেনকিজারের ২০%। অন্যদিকে, জেমিনি সী ফুডের শেয়ার দর কমেছে ৩৭৪ শতাংশ এবং নর্দার্ন জুটের শেয়ার দর কমেছে ১৩৫ শতাংশ।
এছাড়া, ১২ কোটি টাকার নিচে মূলধনী কোম্পানি মুন্নু সিরামিকের শেয়ার দর বেড়েছে ৫৪৪%, লিগ্যাছি ফুটওয়ারের ২৬৩%, দুলামিয়া কটনের ৩৬২%, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ১৭৫%, বঙ্গজের ১৩০%, মেঘনা পেটের ১১২%, মেঘনা কনডেন্স মিল্কের ১০৮%, ওয়াটা ক্যামিকেলের ৯০%, সমতা লেদারের ৮৮% শতাংশ, ইমাম বাটনের ৭৪% এবং জেএমআই সিরিঞ্জের ৪০%।

১৯ কোম্পানির লভ্যাংশ: বিদায়ী অর্থবছরে রেকিট বিনকিজার ৭৭৫% ক্যাশ, জেমিনি সী ফুড ১২৫% বোনাস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ১০০% ক্যাশ, স্টাইলক্রাপ্ট ১০% ক্যাশ ও ৮০% বোনাস, নর্দার্ন জুট ২০% ক্যাশ ও ২০% বোনাস, ফামা এইড ৩৫% ক্যাশ, এ্যাম্বি ফার্মা ৩৫% ক্যাশ, লিবরা ইনফিউশন ৩০% ক্যাশ, এ্যাপেক্স ফুড ২০% ক্যাশ, মুন্নু স্ট্যাফলার্স ১৫% বোনাস, রেনউইক যজেনশ্বর ১২% ক্যাশ, সোনালী আঁশ ১০% ক্যাশ, মডার্ন ডাইং ৮% ক্যাশ, আজিজ পাইপ ৫% বোনাস এবং বিডি অটোকার্স ৩% বোনাস। আর লভ্যাংশ না দেয়ার তালিকায় রয়েছে জুট স্পিনার্স, সাভার রিফেক্টরিজ, কেএন্ড কিউ এবং শ্যামপুর সুগার।

১৯ কোম্পানির ইপিএস : চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই’১৭ হতে মার্চ’১৮) ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের ইপিএস ২৮.৪৩ টাকা, স্টাইলক্রাপ্টের ২৪.৫৫ টাকা, ফার্মা এইডের ১২.১৪ টাকা, মুন্নু স্ট্যাফলার্সের ২.৯৫ টাকা, এ্যাম্বি ফার্মার ২.৫২ টাকা, জেমিনি সী ফুডের ২.১৯ টাকা, রেনউইক যজেনশ্বরের ২.০৮ টাকা, এপেক্স ফুডের ১.৩৯ টাকা, সোনালী আঁশের ১.৩৭ টাকা, মডার্ন ডাইয়ের ০.৯৮ টাকা, বিডি অটোকার্সের ০.৮৩ টাকা, কেএন্ডকিউর ০.৬৯ টাকা, আাজিজ পাইপের ০.৬১ টাকা। অন্যদিকে, শ্যামপুর সুগারের শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫৫.৮৪ টাকা, লিবরা ইনফিউশনের ১২.৬৫ টাকা, জুট স্পিনার্সের ১২.৪৩ টাকা, নর্দার্ন জুটের ১০.৩৮ টাকা এবং সাভার রিফেক্টরিজের ০.৮৬ টাকা।

১৯ কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) : সর্বশেষ শেয়ার দর অনযায়ী ফার্মা এইডের ৩৯.৫১, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের ৪১.৩৩, রেকিট বেনকিজারের ৬০.১৮, স্টাইলক্রাপ্টের ৭১.৩৮, এ্যাপেক্স ফুডের ১২৩.৯৯, জেমিনি সী ফুডের ১৪৪.৪২, এ্যাম্বি ফার্মার ১৬২.৮৩, সোনালী আঁশের ১৬৫.৯৯, মর্ডান ডাইংয়ের ১৯৯.০৪ রেনউইক যজেনশ্বরের ২৬৮.৫২,

কেএন্ডকিউর ২৫৩.৪৮, বিডি অটোকার্সের ২৩৩.০৪, আজিজ পাইপের ২৩২.১৩ এবং মুন্নু স্ট্যাফলার্সের ৮৭৭.৬৫। আর লোকসানি কোম্পানি হিসাবে নেগেটিভ পিইতে রয়েছে জুট স্পিনার্স, সাভার রিফেক্টরিজ, লিবরা ইনফিউশন, শ্যামপুর সুগার ও নর্দার্ন জুট।