দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে ১৫ দিন বন্ধ রাখার দাবি জিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। পাশাপাশি বুধবারের মধ্যে এক্সপোজারের প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন। কারন বর্তমান পুঁজিবাজার এমন অবস্থায় গিয়ে ঠেকছে যে বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজি ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে।

পাশাপাশি পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে পারছে না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। কিছুদিন পরপর অনিয়ন্ত্রিত উত্থান–পতন বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির ব্যর্থতাকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

বাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পতন ঠেকাতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফোন করে শেয়ার কেনার কথা বলা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টার কোনো সুফল মেলেনি। কিছুদিন পরপর বাজারের উত্থান পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করে বারবার লোকসানের মুখে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন।

সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক টানা দরপতনের কারণে শেয়ারের বিক্রির চাপ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আছে চরম ক্রেতা সংকট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাজারের বারবার উত্থান–পতনের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন। এতে তাঁদের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে।

মার্চেন্ট ব্যাংকের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, শেয়ারবাজারে কারসাজির ঘটনা ঘটিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়ার কোনো নজির নিকট অতীতে নেই। কিছু কারসাজির ঘটনায় কারসাজিকারীরা নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি পেয়েছেন, যা কারসাজিকে আরও বেশি উৎসাহিত করেছে। ফলে সব মিলিয়ে বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরেছে।

এ জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানকে দায়ী করে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশিদ চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার একেবারেই অভিবাবকহীন হয়ে পড়েছে।পুঁজিবাজারে উত্থান ঘটাতে আমাদের সিকিউরিটি কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এত উদ্যোগের পরও যেখানে পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে নিয়ন্ত্রকদের উচিত অন্তত ১৫ দিনের জন্য পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা। পরবর্তীতে অবজারবেশন করে লেনদেন চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাজারের বড় সমস্য হলো কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকা। তারা একের পর এক অস্তিত্বহীন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন থামালেই আস্থা ফিরবে। তার সাথে বাইব্যাক আইন করলেই অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি ফিরে পাবেন। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সবাই শুধু মুখে মুখে পদক্ষেপের কথা বলেন।

অথচ বাস্তবায়নের জন্য কেউ ফলোআপ করেন না। সপ্তাহের তিনদিন চলে গেছে অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো এক্সপোজার নিয়ে সার্কুলার জারি করছেনা। তিনি বলেন এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সাল থেকেই বাজারের অগ্রগতি প্রতিনিয়তই বাধাগ্রস্থ করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে পুঁজিবাজারের পতন ঘটানোই যেনো তাদের মূল লক্ষ্য। কাজেই বর্তমানে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে তা আগামিকালের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে জারির দাবী জানান।