দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : জাকারিয়া আহাদ নিজেই ‘অবৈধভাবে’ রয়েছেন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে। এখন তিনি আইন বহির্ভূতভাবে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ নবায়নের আবেদন করেছেন বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রগ্রেসিভ লাইফের বর্তমান মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিপেন কুমার সাহা রায়ের মেয়াদ চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইডিআরএ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমোদন না আসায় তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দিপেন কুমারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে পরবর্তী বোর্ড সভা পর্যন্ত সিইও হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া আহাদ। গত ২ অক্টোবর এক চিঠির মাধ্যমে জাকারিয়া আহাদ বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে এমন আবেদন করেন। তবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২-এর ৪ ধারা অনুযায়ী নবায়নের জন্য বোর্ড সভার কার্যবিবরণী, জীবনবৃত্তান্ত ও সম্মানী প্যাকেজসহ আবেদন করতে হয়। কিন্তু বোর্ড সভায় কোনো ধরনের অনুমোদ না নিয়েই দিপেন কুমারের সিইও হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। যা আইনের পরিপন্থী, বলছেন খোদ কোম্পানিটির একাধিক পরিচালক।

কোম্পানিটির একাধিক পরিচালক বলেন, ১৫৪ ও ১৫৫তম বোর্ড সভায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য দিপেন কুমারকে সিইও হিসেবে নবায়নে আগ্রহী নন। কারণ গত তিন বছরে তিনি কোম্পানির কোনো উন্নতি করতে পারেননি। উল্টো পরিচালকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন তিনি।

এদিকে প্রগ্রেসিভ লাইফ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান জাকারিয়া আহাদ অবৈধভাবে পদে রয়েছেন। কারণ ২০১২ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় জাকারিয়া আহাদ পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন (২০১২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ৫৭ ও ৫৮ পৃষ্টায় এ বিষয় উল্লেখ আছে)। পরবর্তীতে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী (পৃষ্ঠা নম্বর ১১, ১১ ও ১৫) জাকারিয়া আহাদ আর পরিচালক নির্বাচিত হননি। এছাড়া ২০১৫ সালের পর প্রগ্রেসিভ লাইফের আর কোনো বার্ষিক সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।

অথচ কোম্পানির আর্টিকেলের ১১২ ধারা অনুযায়ী, পরিচালকদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিধান আছে। আর বীমা আইন, ২০১০ এর ৭৯ ধারা অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অবশ্যই পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।

এ বিষয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, জাকারিয়া আহাদ ২০১২ সালে পরিচালক পদ থেকে অবসরে যান। এরপর তিনি আর পরিচালক হিসেবে আসেননি। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও তিনি পরিচালক নির্বাচিত হননি। এরপর কোম্পানির আর কোনো এজিএম হয়নি এবং কোনো পরিচালক অবসরে যাননি। তাহলে নতুন পরিচালক হিসেবে কারও কোয়াপ (সংযুক্ত) হওয়ার সুযোগ নাই। আর পরিচালক না হলে চেয়ারম্যান হওয়ারও সুযোগ নাই। সুতরাং জাকারিয়া আহাদ কিছুতেই বৈধ চেয়ারম্যান হতে পারেন না।

দিপেন কুমারের নবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান নিজেই অবৈধ। তাছাড়া প্রগ্রেসিভ লাইফের বোর্ড সভায় দিপেন কুমারকে আবারও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একজন বৈধ চেয়ারম্যানও সিইও’র বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাহলে জাকারিয়া আহাদ কীভাবে পরবর্তী বোর্ড সভা পর্যন্ত দিপেন কুমারের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। ওই পরিচালক আরও বলেন, এখন প্রগ্রেসিভ লাইফের পরিচালকরা একতাবদ্ধ নন। পরিচালকরা বিভক্ত হয়ে গেছেন। সুতরাং পরবর্তী বোর্ড সভা কবে হবে সে বিষয় কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। যদি বোর্ড সভা পাঁচ বছর পর হয়, তাহলে কি দিপেন কুমার আগামী পাঁচ বছর সিইও হিসেবে থেকে যাবেন?

জাকারিয়া আহাদ বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভাব হয়নি। আর দিপেন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আদালতে মামলা থাকার কারণে ২০১২ সালের পর থেকে এজিএম করতে সমস্যা ছিল। আদালতের রায় অনুযায়ী আমরা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের এজিএম করেছি। বাকি বছরগুলোর এজিএম পর্যায়ক্রমে করা হবে। তবে জাকারিয়া আহাদের চেয়ারম্যান হওয়া এবং সিইও পদে তার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে দিপেন কুমার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’

কোম্পানিটির সচিব মোহাম্মদ জহির উদ্দিনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করায় জাকারিয়া আহাদকে বোর্ড কোয়াপ করে পরিচালক করেছে এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে। বোর্ড যাকে খুশি তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে পারে। এখানে কোনো সমস্যা নাই।’

জাকারিয়া আহাদ তো ২০১২ সালে পরিচালক পদ থেকে অবসরে যান। এরপর তিনি আর পরিচালক নির্বাচিত হননি। এছাড়া ২০১৫ সালের পর আপনাদের আর কোনো এজিএম হয়নি এবং কোনো পরিচালক পদত্যাগ করেননি। তাহলে কোন পরিচালকের পরিবর্তে জাকারিয়া আহাদ পরিচালক নির্বাচিত হলেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তার কোনো উত্তর দেননি কোম্পানিটির সচিব জহির উদ্দিন।