দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো ২০১৯ সালের আর্থিক হিসাব প্রকাশ শেষে বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য আতঙ্ক হিসাবে কাজ করছে এজিএম পার্টি। যেসব কোম্পানি ক্রমাগত নিচের দিকে ও দুর্নীতি পরায়ন সেসব কোম্পানির এজিএমে এই পার্টির উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্যসব কোম্পানিও এর বাহিরে থাকে না।

প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সামর্থ্য অনুযায়ি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর এরই মধ্যে ২০১৯ সালের জন্য কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের লক্ষে লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যা এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে।

কিন্তু অনেক সময় একটি কোম্পানি ভালো আয় করা সত্তে¡ও পরিচালকরা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে তা থেকে বঞ্চিত করে বিনিয়োগকারীদেরকে। আবার তাদের দূর্ণীতির কারণে বিলীনও হয়ে যায় অনেক কোম্পানি। এদিকে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি চলে এসেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ না চাইলেও এজিএম পার্টি নিজেরাই চাঁদা নির্ধারণ করে দায়িত্ব পালন করে।

যার পরিমাণ সাধারণত ৫-১০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না তাদের দূর্বলতা বা অনৈতিকতা প্রকাশ হওয়ার ভয়ে। এছাড়া এজিএমে পার্টির হাত থেকে মানসম্মান রক্ষার জন্যও অনেকে আবার বাধ্য হয় তাদের চাঁদা দিতে।

বিভিন্ন কারনে একটি কোম্পানির এজিএমে এই পার্টির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কোম্পানি অনেক সময় নিজেরা তাদের নিয়োগ দেয়। আবার অনেক কোম্পানিতে পার্টিগুলো জোরপূর্বক প্রবেশ করে। যেসকল পরিচালকরা নিয়োগ দেয়, তাদের অধিকাংশ পরিচালক দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকে। আর এই অপকর্ম আড়াল করতেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে কোন ক্ষেত্রেই তাদের প্রভাব লক্ষ করা যায় না। এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সততার কারনেই এজিএম পার্টি কিছু করতে পারে না বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানি আইন অনুযায়ি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোকে প্রত্যেক বছর এজিএম করতে হয়। যাতে করে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। যেখানে তারা কোম্পানির আলোচ্য বিষয়সমুহ ইতিবাচক মনে হলে পাশ, অন্যথায় না করতে পারেন। কিন্তু ঘটে যাওয়া কোম্পানিগুলোর এজিএমে গিয়ে দেখা যায় বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের মতামত দেওয়ার মতো সুযোগ পান না।

কোম্পানির সমস্ত বিষয়ে মতামত দেন কোম্পানিরই ভাড়া করা কিছু লোক। যাদের কে এজিএম পার্টি হিসাবে ডাকা হয়। বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি কোম্পানির এজিএমে একই লোকের উপস্থিতি। সাধারন শেয়ারহোল্ডাররা তাদের চেনেন না। কিন্তু তারাই দেখা যায় সব বিষয়ে মতামত পেষণ করেন। যার ফলে সাধারন শেয়ারহোল্ডাররা কোনো কিছুই করতে পারে না।

আর কেউ যদি কিছু বলতে চায় তাহলে তাকে মার খেতে হয়। শেয়ারহোল্ডাররা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে আর কতোদিন অধিকার বঞ্চিত থাকব। তাই আবার এজিএম পার্টির খপ্পরে শেয়ারহোল্ডাররা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয় সেদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজর দেওয়া উচিত।

এদিকে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) তুমুল হট্টগোল হয়েছে। ইজিএমের শুরুতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। এসময় তারা তাদের বক্তব্য দেওয়ার দাবি জানায়। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মহাখালীর ট্রাস্ট মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বিনিয়োগকারীদের শান্ত করতে ৪ থেকে ৫ জনের বক্তব্য শোনেন।

বিনিয়োগকারীদের নেতা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রানারের চেয়ারম্যান প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ এফডিআর করার প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ হট্টগোল শুরু করে। অনেক চেষ্টার পর চেয়ারম্যান পরিস্থিতি শান্ত করেন। আগামীতে শেয়ারহোল্ডারদের ভাল লভ্যাংশ দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এরপর এজিএমে শেয়ারহোল্ডাররা বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারবাজারে আসার সময় কোম্পানিটি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছে সেই খাতে খরচ করা এবং আগামী বছর অন্তত ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার দাবি জানায়। সভার শেষ দিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য পরিচালনা পর্ষদের ঘোষিত ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ (৫ শতাংশ বোনাস ও ১০ শতাংশ নগদ) অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করেন। শেয়ারহোল্ডাররা সর্বসম্মতিক্রমে পাস করেন। হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সভায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রিয়াজুল হক চৌধুরী, সিএফও নজরুল ইসলাম, কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমানসহ পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শেয়ারহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।