শহিদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালটি অতিক্রান্ত হচ্ছে পুঁজিবাজার। এই উত্থান, এই পতন। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে বছরটি পার হয়েছে। লেনদেনের গতি বৃদ্ধি আর সূচকের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদি হওয়ার আগেই তা ভেঙে গেছে। দুর্দিন কাটিয়ে পুঁজিবাজারে সুদিন ফেরার আভাস দিলেও খুব একটা তা স্থায়ী হয়নি বছরের কোন সময়। ফলে বছরজুড়ে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বেড়েছে।

যদিও বাজার ধরে রাখতে ২০১৯ সাল জুড়ে নানামুখী প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসব প্রচেষ্টা বা পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে কার্যকর হলে নতুন বছরে (২০২০) ইতিবাচক ধারায় ফিরবে পুঁজিবাজার এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণেই ২০১৯ সালের বিপরীত চিত্র দেখা যেতে পারে ২০২০ সালের পুঁজিবাজারে সেগুলো হলো: মার্চেন্ট ব্যাংক এবং তাদের এমডিদেরকেও শেয়ার ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে বিএসইসি যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইসিবির মত আর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হবে ২০২০ সালে। যা পুঁজিবাজারে মার্কেট মেকারের ভুমিকায় কাজ করবে।

বছরজুড়ে দরপতনে তলানিতে পুঁজিবাজার, যেকোনো সময়ের তুলনায় কম দামে ভালো শেয়ার কেনা যাচ্ছে। এখন নতুন বছরের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা, দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাবেন। ব্রোকারেজ হাউজগুলো লোকসান কাটিয়ে উঠবে। সেই কাজটির জন্য বাজারের চলমান আস্থা ও তারল্য সংকট দূর করতে হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জসহ (সিএসই) শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফায় ফিরবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারেও স্বস্তি ফিরবে। নতুন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরবে। বর্তমানে অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে প্রায় ৯০ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম।

বিনিয়োগকারী কাশেম বলেন, এখন আমাদের প্রত্যাশা একটাই, বাজার ভালো হোক। বিনিয়োগকারী আমরা সবাই হারানো পুঁজি যেন ফিরে পাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকি। নতুন করে যেন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম করতে না হয়।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, উত্থান-পতন পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এতদিন পতন হয়েছে, এখন সময় উত্থানের, আশা করছি, পুঁজিবাজার ভালো হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে প্রাণ ফিরবে। বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হবে। চুপচাপ বসে থাকা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হবেন। বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আসবে। বাজার প্রসারিত হবে। অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার পাশাপাশি সঠিকভাবে বাজার পরিচালনা করতে হবে। ডিএসই ও সিএসই এবং বিএসইসিকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কোনো অনিয়মকারী যাতে ছাড় না পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিনে ২০১৯ সালের টানা ১১ মাস দরপতনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীরা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। যা আগের বছরের চেয়ে ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি ৪৪ কোটি টাকা কম। আর শতাংশের হিসেবে ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ কম৷ সূচক ও লেনদেন কমায় ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন ৪৭ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা কমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, বাজারে এখন টাকা নেই। সরকারের উচিত, এখন সহজ শর্তে ফান্ড দিয়ে সার্পোট দেওয়া। আমরা ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড চেয়েছি। অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও সায় দিয়েছে। শিগগিরই হয়তো পাব। এ টাকা পেলে আশা করিছ, বাজার ভালো হবে।