দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার সূচকের উঠানামা নিয়ন্ত্রন করছে চার কোম্পানি। এ চার কোম্পানির কোনটার দর বাড়লে সূচকের উত্থান ঘটে। আর এ চার কোম্পানির দর কমলে সূচকের পতন ঘটে। সাম্প্রতিক পুঁজিবাজারের অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এমন অবস্থা। ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, লাফার্জহোলসিম ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ভালো কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি।

ফলে শেয়ারবাজারের সূচকের উত্থান-পতনেও এ কোম্পানিগুলো এক ধরনের ভূমিকা রাখে। এই কোম্পানিগুলোই সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের পতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। অথচ এই চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে কোনো একটিরও শেয়ারের দাম বাড়লে পতনের বদলে ঊর্ধ্বমুখে থাকতে পারতো শেয়ারবাজার।
টানা পতনের বৃত্তে আটকে থাকা শেয়ারবাজারে আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবারও লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩ দশমিক ২০ পয়েন্ট।

সূচকের এই পতনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ইউনাউটে পাওয়ার। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমার কারণে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের কারণে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৪ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। এছাড়া লাফার্জাহোলসিমের শেয়ারে দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৪ দশমিক ১৭ পয়েন্ট। আর ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক কমিয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চার কোম্পানির প্রতিটিই এককভাবে সাড়ে ৩ শতাংশের ওপরে ডিএসই’র প্রধান সূচক কমাতে ভূমিকা রেখেছে। তবে তালিকাভুক্ত ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার কারণে সার্বিকভাবে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, লাফার্জহোলসিম ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন- এই চার প্রতিষ্ঠানের যে কোনো একটি শেয়ারের দাম বাড়লেই ঊর্ধ্বমুখী থাকতো ডিএসইর প্রধান সূচক। এমনকি যে কোনো একটির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও পতনের হাত থেকে রক্ষা পেতো সূচক।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো: সোমবার ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ারের দাম কমেছে ১১ টাকা ৯০ পয়সা। ১৮০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির ডিএসই’র বাজার মূলধনে অবদান ১৯ হাজার ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বিদেশিদের কাছে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং সরকারের কাছে দশমিক ৬৪ শতাংশ আছে।

গ্রামীণফোন: কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। এক হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির ডিএসই’র বাজার মূলধনে অবদান ৩৫ হাজার ২০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ আছে।

লাফার্জহোলসিম: সোমবার লাফার্জহোলসিমের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। এক হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির ডিএসই’র বাজার মূলধনে অবদান পাঁচ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ১ শতাংশ আছে।

ইউনাইটেড পাওয়ার: সোমবার এ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। ৫২৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ডিএসই’র বাজার মূলধনে অবদান ১৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আছে।