দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) কনফারেন্স অফ পার্টিজের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি তুলে ধরবেন পৃথিবী বাঁচানোর রূপরেখা। এ সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর যুক্তরাজ্যে এটা হবে তার প্রথম সফর। ১৫ দিনের এই সফরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের কনফারেন্স অফ পার্টিজের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদল রোববার গ্লাসগোর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।

আব্দুল মোমেন আরও জানান, আগামী ১ ও ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন। ১ নভেম্বর কপ-২৬-এর শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিন সিভিএফ কমনওয়েলথের একটি যৌথ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবেও অংশ নেবেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি দ্য ক্রিটিকাল ডিকেইড শীর্ষক একটি সভায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ নভেম্বর ওম্যান অ্যান্ড ক্লাইমেট শীর্ষক সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন।

‘সিভিএফের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সিভিএফ-কপ-২৬ লিডার্স ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, জয়বায়ু অভিযোজন ও অর্থায়নের লক্ষ্যে আহ্বান জানিয়ে ঢাকা-গ্লাসগো ডিক্লেয়ারেশন গৃহীত হবে বলে আমরা আশা করছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের উদ্দেশে ‘আ কল ফর ক্লাইমেট প্রোসপারিটি’ শীর্ষক বক্তব্য প্রদান করবেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, প্রিন্স অফ ওয়েলস ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ আরও কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরসূচি অনুযায়ী, ৩ থেকে ৮ নভেম্বর লন্ডনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি শহরের ওয়েস্ট মিনস্টার প্যালেসে দেশটির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

৩ থেকে ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্স সফর করবেন। এই সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বেশ কিছু ফরাসি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ এমইডিএইএফএর প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময় বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও লেটার অফ ইনটেন্ট সই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ নভেম্বর ইউনেসকোর ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরার পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।’

প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও।

তিনি বলেন, প্যারিসের এনগেজমেন্টটা খুব এক্সটেনসিভ। সেখানে তিনটি স্থানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। ফ্রান্সের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, আমরাও সেখানে রপ্তানি করতে চাই। এয়ারবাসের সঙ্গে সেখানে বৈঠক আছে, এভিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স। ইউরোপে পরিবর্তনের ফলে নতুন করে ইইউ গঠিত হওয়ার পরে এটিই প্রথম সফর।’

প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করছে ঢাকা। সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক মজবুত করছি। আপনারা খেয়াল করবেন, আমরা যখন মুজিব চিরন্তন করলাম। প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশের লিডারশিপের ওপর আস্থা দেখিয়েছে। এ জন্য দেখিয়েছে যে আমাদের গত ১২ বছরের অর্জন অভাবনীয়।

‘এ অবস্থায় আমরা সম্পর্কগুলো আরও মজবুত করতে চাই। একটি বড় লক্ষ্য আমাদের, আমরা দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চাই। আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য সব আছে। আমরা এটাতে খুব জোর দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের আহ্বান করছেন বিনিয়োগের জন্য। আগেও আমরা যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, যথেষ্ট আকর্ষণ দেখা গিয়েছিল। তাদের অনেক কোম্পানি সারা বিশ্বে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশও তাদের বিনিয়োগের জায়গা হতে পারে। ফ্রান্সে সরাসরি ফ্লাইট নাই। আমরা এটা নিয়েও আলাপ করব। আশা করছি, আমরা এটা পেয়ে যাব।

‘এই যে তিনি স্কটল্যান্ডে কমিউনিটির সঙ্গে আলাপ করবেন, সেখানেও ব্যবসার কথা উঠবে। লন্ডনে বিপুল ব্যবসায়ী অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের অনেক ব্যবসায়ী সেখানে যাচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে যে বৈঠক করবেন তাতে পুরোনো সম্পর্ক ঝালাইয়ে জোর থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। বহু দ্বিপক্ষীয় ও মাল্টিলেটারেল আলোচনা অনগোয়িং।

‘আমাদের একটি বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে মুভ করেছি। এতে বিভিন্ন সুবিধা যেটা আমরা পাই, এটা যদি ধরে রাখতে চাই…এরই মধ্যে ইউএনের সঙ্গে আলাপ করে ২০২৯ সাল পর্যন্ত আমরা এটা নির্ধারিত করেছি। আমরা আরও চাই। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলাপ করব।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক রয়েছে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়েও কথা বলছি সাম্প্রতিককালে। আগে যেগুলো আলোচনা হয়েছিল, সেগুলো আবার ঝালাই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হলে এটি হবে হাইট অফ দ্য ডায়ালগ।’