দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০২২ সালের প্রথম তিন সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে কিছুটা দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা কমেছে। অবশ্য আগের তিন সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

আগের তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ২৩ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২ হাজার ৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ৬ হাজার ১৪৯ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯২০ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮ হাজার ২৪৩ কোটি ১৯ লাখ ২৫ হাজার ১৩৫ টাকার।

অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ২ হাজার ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৭ হাজার ২১৫ টাকা বা ২৫ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮.১৪ পয়েন্ট বা ১.১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৭.৫৫ পয়েন্টে।

অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮.৪২ পয়েন্ট বা ০.৫৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩.০৪ পয়েন্ট বা ১.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৯৯.৯৭ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ৬০২.৩৪ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ১১ টাকা।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি ৯৬ লাখ ১৪ হাজার ১৩৪ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ হাজার ৩৩২ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৭ টাকার মূলধন কমেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৬.৯৩ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে ১৬.৮০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.১৩ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ কমেছে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৯টির, কমেছে ২৬৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির শেয়ার ও ইউনিট দর। গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানি হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, পাওয়ার গ্রিড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, আরএকে সিরামিকস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ফরচুন সুজ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, ফু-ওয়াং ফুড ও ওরিয়ন ফার্মা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৭৮ কোটি ২২ লাখ ৮১ হাজার ৭০৯ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৩০ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৫ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৫২ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার ২৬ টাকা বা ২৩ শতাংশ কম হয়েছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩০.৫৫ পয়েন্ট বা ১.১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৮৬.৬২ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৫০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৪টির দর বেড়েছে, ২৩৫টির কমেছে এবং ৩১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।