দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদনশীল কিছু কোম্পানি মূল ব্যবসা পাশ কাটিয়ে শেয়ার ব্যবসা করছে। এভাবে কোম্পানিগুলো ভালো শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই কোম্পানিগুলোর দেখানো অস্বাভাবিক মুনাফা একসময় লোকসানে পতিত হতে পারে। তাই শেয়ার ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোকে কমিশনের নজরদারিতে আনা উচিত।

সোমবার রাজধানীর দিলকুশায় হোটেল পূর্বাণীতে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটি মার্কেটের (বিএএসএম) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির প্রভাব’ শীর্ষক কর্মশালায় প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আবু আহমেদ বলেন, যেসব কোম্পানি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত মুনাফা দেখাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে কোম্পানিগুলো লোকসানও দেখাবে। আর অস্বাভাবিক ইপিএস দেখানো কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

আইপিও কোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইপিও কোটার সুযোগ নেওয়ার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান নামওয়াস্তে আরজেএসসি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিচ্ছে। যাদের শেয়ারবাজারে ভূমিকা নেই। এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেই প্রতিষ্ঠানের যোগ্য বিনিয়োগকারী হওয়া যায়। এর মাধ্যমে তারা আইপিওর সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু আমার মতো অনেকে আছেন, যাদের শেয়ারবাজারে এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ থেকেও তা পাচ্ছেন না।

আমরা যদি আইপিওতে ৫০টি শেয়ার পাই, যোগ্য বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন ৫ হাজার। এই বৈষম্য দূর করতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত। অন্যথায় কোটা সুবিধা কমানো উচিত।’ লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি খোলার থেকে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিতে ৫ থেকে ১০ বছর বিনিয়োগে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে। এছাড়াও প্রয়োজনের সময় টাকাও দ্রুত তুলে নেওয়া যাবে।’

মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বেহাল দশায় রয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো অ্যাসেট ম্যানেজারদের উপর অনাস্থা। সব ফান্ড ম্যানেজারদের জন্য একই হারে কমিশন দেওয়া ঠিক না। ফান্ডের পারফরমেন্সের উপর কমিশন নির্ধারণ করা উচিত। এতে করে যারা ভালো করে তারা আরও উৎসাহিত হবে।

অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, সরকার শেয়ারবাজারের জন্য অনেক কিছু করেছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে শেয়ারবাজার পরিপন্থি অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের আকার ১ লাখ থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার করেছে, ২০ শতাংশ বা তার বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির কর ছাড়ের সুবিধা বাতিল, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে গ্রামীণফোনের কর ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ আনা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৫ শতাংশ আনার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিরডাপ) পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন,

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকি ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব এবং সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএএসএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।