দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা ২০২১ সালের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর এই লভ্যাংশ দিতে কোম্পানিটিকে রিজার্ভ (পুঞ্জীভূত মুনাফা) ব্যবহার করতে হয়েছে। ঘোষিত লভ্যাংশের চেয়ে বেশি মুনাফা করলেও ন্যূনতম করপোরেট করের প্রভাবে নিট মুনাফা কমেছে বলে জানিয়েছে রবি কর্তৃপক্ষ।

ন্যূনতম করপোরেট কর মোবাইল ফোন অপারেটরদের অযৌক্তিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন রবি’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম রিয়াজ রশীদ। মুনাফার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে মুনাফা অর্জন করতে পারলেও ২ শতাংশ ন্যূনতম করের ফলে গুরুতর ক্ষতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই অযৌক্তিক করের বাধ্যবাধকতা না থাকলে আমাদের মুনাফা ১৮০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩৪৩ কোটি টাকা হতো। অন্য কথায়, ২ শতাংশ ন্যূনতম কর প্রত্যাহার করা হলে আমরা ২০২১ সালে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৬৩ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করতে পারতাম।’

বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনায় এমন মন্তব্য করেন রবির সিইও। তিনি বলেন, ‘তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট করে যে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম করের প্রভাবে সে সুবিধা থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’ এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এই কর থেকে মুক্ত করার অনুরোধ জানান তিনি।

আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনে জানানো হয়, ২০২১ সালে রবির আয় ও গ্রাহক, দুটোই বেড়েছে। ২০২১ সালে রবির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে ভয়েস সেবায় রবির আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ডাটা সেবায় আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১ সালে ১৮০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে রবি, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। রবি জানিয়েছে, ২ শতাংশ ন্যূনতম করের বাধা না থাকলে ২০২১ সালে করপরবর্তী মুনাফার পরিমাণ হতো ৩৪৩ কোটি টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চতুর্থ প্রান্তিকে রবির ব্যবসা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়নি। ২০২১ হিসাব বছরের নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) মোবাইল অপারেটরটির নিট মুনাফা হয় ১৬৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৯ শতাংশ বেশি।

এ সময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৩২ পয়সা। আর শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটি নিট মুনাফা হয় মাত্র ১৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হয় মাত্র ২ পয়সা। ফলে বছর শেষে কোম্পানির ইপিএস হয় মাত্র ৩৪ পয়সা। অবশ্য ইপিএস আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রবি জানায়, ২০২১ সালে রবির গ্রাহক সংখ্যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ডাটা গ্রাহক সংখ্যা ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৯৬ লাখে পৌঁছেছে এবং রবির ফোর-জি গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ২ কোটি ৩৮ লাখে পৌঁছেছে।

অপারেটরটির মোট গ্রাহকের ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ফোর-জি গ্রাহক। ২০২১ সালে রবির মোট গ্রাহকের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিলেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা এ খাতে সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রতি মাসে গ্রাহক প্রতি ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে রবির ডাটা ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ৪ জিবি ডাটা ব্যবহার করেছেন।