দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দূর করতে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর রবিবার থেকে টাকা উত্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। এর মধ্যে টানা তিন কর্মদিবস সূচক বাড়ার পর মঙ্গলবার রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক চিঠি বিনিয়োগকারীদেরকে উৎফুল্ল করে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে করা যায় কি না, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে ইতিবাচক সায় দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

ফলে পুঁজিবাজার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করছেন বিনিয়োগকারীরা। সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি পাল্টানোর প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বিডিবিএল ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুম সাঈদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা যাচ্ছে। তবে ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের মাঝে যেমন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, তেমনিভাবে এক্সপোজার কস্ট প্রাইসে কাউন্ট করা হলে ব্যাংকের বিনিয়োগটাও বাড়বে এতে বাজার আরও ভালো হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করা হয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভালো উদ্যোগ। আশা করি সামনে লেনদেন বাড়বে, তেমনি পুঁজিবাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এসবিসি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে কস্ট প্রাইসে বা ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগ সীমা গণনার পরামর্শ দিয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন চুড়ান্ত আদেশ জারি করবে। তবে এতোদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ রাঙানির কারণে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের দিকে চোখ মেলেও তাকায়নি।

এখন বর্তমান গভর্ণরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার বান্ধব মনোভাব পোষণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণে এই পরিবর্তন ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারমূখী হতে উৎসাহিত করবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাবেক সিইও সাইফুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় সুখবর। কারণ ব্যাংকগুলো বন্ডে বিশাল আকার বিনিয়োগ করেছে। এতোদিন বন্ডের বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমার মধ্যে গণনা করায় পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। এখন বন্ডের বিনিয়োগ তাদের বিনিয়োগ সীমারা বাইরে রাখায় পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এদিকে আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০.৮৭ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০০.১০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৮.১৫ পয়েন্ট বা ০.৫৯ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৪.৬১ পয়েন্ট বা ১.১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৭০.৫১ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৫৮.৮২ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৯৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস হতে ১২ কোটি ১৪ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৮৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

ডিএসইতে আজ ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫২টির বা ৩৯.৭৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৬২টির বা ৪২.৪১ শতাংশের এবং ৬৮টির বা ১৭.৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৪৮.৬০ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৬৭.৩৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৭টির, কমেছে ১০৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬২টির দর। আজ সিএসইতে ২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।