দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎস কর নিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে। মুলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্যাশ ডিভিডেন্ডের উপর উৎস কর কর্তনের পরিকল্পনার করছে, এমন খবরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। পাশাপাশি এনবিআর যদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ক্যাশ ডিভিডেন্ডের উপর উৎস কর কর্তনের বিধান আরোপ করে, তাহলে নেতিয়ে পড়া বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়ে এইমস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, ‘আগে এমন কোনো বিধান ছিল না। এনবিআরের এই পদক্ষেপ মিউচুয়াল ফান্ড খাতের জন্য বড় ক্ষতি বয়ে আনবে।’ আমরা ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছি। এনবিআর এই বিষয়ে শুধু মতামত দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত হতে আরও সময় লাগবে।’

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মনোয়ার হোসেন এই বিষয়ে বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এমনিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। আমরা ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। যাতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে। এখাতে উৎসে কর কর্তনের বিধান কার্যকর হলে খাতটি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, এনবিআর যে মতামত দিয়েছে তা অবাস্তব। মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট হোল্ডারদের সুরক্ষিত করার জন্য এটি এখনই সমাধান করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ি, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে জুলাই-জুন ক্লোজিংয়ের ৩২টি ফান্ডের মধ্যে এই পর্যন্ত ২০টি ফান্ড সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং ইউনিট হোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যে ১৬টি ফান্ড আগের বছরের তুলনায় এবছর কম ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, দুটি বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে এবং অন্য দুটি পূর্ববর্তী বছরের সমপরিমাণ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এদিকে, ২০টি ফান্ডের মধ্যে ১৯টি ফান্ডের ইউনিট প্রতি আয় (ইপিউ আগের অর্থবছরের তুলনায় কম হয়েছে।

জানা গেছে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মিউচ্যুয়াল ফান্ড সম্পদ মাত্র ০.৫৩ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। ভারতের জিডিপিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পরিমাণ ১১ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩২ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১৮ শতাংশ। এমনকি পাকিস্তানের জিডিপিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড সম্পদের পরিমাণ ১.৫১ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাপী সম্পদের গড় পরিমাণ ৬২ শতাংশ।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্যাশ ডিভিডেন্ডের উপর উৎস কর কর্তনের পরিকল্পনার করছে, এমন খবরে আজ বড় উত্থানের বাজারেও ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৩টির দর বেড়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ২৭টির দর অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে ৪টির।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এমনিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এখাতে আইপিও কোটা কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া, খাতটির উন্নয়নে বর্তমান কমিশন এযাবত দৃশ্যমান তেমন কিছু করেনি। যে কারণে এখাতে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ থেকেই গেছে। যদি এনবিআর নতুন করে উৎস কর আরোপ করে, তাহলে খাতটির অস্তিত্বই সঙ্কটের মুখে পড়বে।