দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শত শত কোটি টাকা পরিচালকেরা নিজেদের কোম্পানির মাধ্যম সরিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে তারা কোম্পানিটির অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়মকেও তোয়াক্কা করেননি। যারা নিজেদের মতো করে আইডিআরএ’র বেধেঁ নিয়মের থেকে কোথাও বেশি, কোথাও কম বিনিয়োগ করেছেন। কোম্পানিটির সবশেষ আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষকের তথ্যে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

আইডিআরএর নির্দেশনা অনুযায়ি, জীবন বীমা কোম্পানির পলিসিহোল্ডারের দায় বা বীমাকারীর সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু প্রাইম ইসলামী লাইফ কর্তৃপক্ষ সরকারি সিকিউরিটিজে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ৩০ শতাংশ হিসাবে ২৫৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা দরকার। এ হিসাবে সরকারি সিকিউরিটিজে ২৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

আইডিআরএ’র আরেক নির্দেশনায় স্থাবর সম্পদে পলিসিহোল্ডারের দায় বা বীমাকারীর সম্পদের ২০ শতাংশ বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ হিসেবে ওই সম্পদে প্রাইম লাইফের ১৬৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা করেছে ২৭৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এদিকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বীমা কোম্পানি পলিসিহোল্ডারের দায় বা বীমাকারীর সম্পদের সর্বোচ্চ ১০শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে বলে আইডিআরএর নির্দেশনা আছে। তবে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স তা ভঙ্গ করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে। বীমা কোম্পানিটির ১০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ৮৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও করা হয়েছে ৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

অন্যান্য বিনিয়োগের বিষয়ে আইডিআরএ’র নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওই খাতে পলিসিহোল্ডারের দায় বা বীমাকারীর সম্পদের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। এ হিসেবে অন্যান্য খাতে প্রাইম লাইফের সর্বোচ্চ ৪২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও তারা করেছে ১৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত বা নিয়ম বর্হিভূত বিনিয়োগ করা হয়েছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীমা কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা নেমে এসেছে ৩৮.০৮শতাংশ । অথচ আইডিআরএর ২০১৮ সালের ২৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ি কমপক্ষে ওই শেয়ার ধারন ৬০ শতাংশ করা দরকার। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রাইম ইসলামী লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩.৯২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের হাতে।