দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে অনেকটাই রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি লিবরা ইনফিউশনের লিমিটেড। মন্ধা পুঁজিবাজারে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে হরহামেশা কারসাজি চলছে। তবে কারসাজি হলেও দেখার কেউ নেই। গত এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

কোম্পানিটির এমন শেয়ারের শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। আর শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

তাদের অভিমত, লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। যে কারণে সহজেই বাজারে এই কোম্পানির শেয়ারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা সম্ভব। কোম্পানিটির লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে হয়তো কোনো বিশেষ চক্র এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেয়ারের দাম বাড়াতে পারে।

সম্প্রতি লিব্রা ইনফিউশনের পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ এবং ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য এই লভ্যাংশ ঘোষণার আগে থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়তে দেখা যায়।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮০৭ টাকা ৮০ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়ে এখন প্রতিটি শেয়ারের দাম এক হাজার ৫০৭ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে। অর্থাৎ এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৯৯ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অন্যভাবে বলা যায়, কোনো বিনিয়োগকারী যদি ২৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এক লাখ টাকার শেয়ার কেনেন, বর্তমানে তার শেয়ারের দাম এক লাখ ৮৬ হাজার ৬৩০ টাকা। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় এক মাসে লাভ হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৩০ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে গত ৫ অক্টোবার ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তা প্রকাশ করা হয়।

সেখানে ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে, তার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।

ডিএসইর নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ এমন বক্তব্য দিলেও ২২ অক্টোবর ডিএসইর মাধ্যমে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসে। ওই ঘোষণায় জানানো হয়, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ এবং ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোম্পানিটির ঘোষণা করা নগদ লভ্যাংশ সমাপ্ত হিসাববছরে করা মুনাফার কয়েকগুণ বেশি। অবশ্য নগদ লভ্যাংশ শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণা আসার আগে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল এক হাজার ৩৪৬ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ লভ্যাংশ ঘোষণা হওয়ার পর প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় দুইশ টাকা বেড়েছে। আর লভ্যাংশ ঘোষণা হওয়ার আগেই বেড়েছে পাঁচশ টাকার বেশি।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ার সংখ্যা খুবই কম।

কোম্পানিটি সম্প্রতি বড় ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। হয়তো এই লভ্যাংশের তথ্য কোনো বিশেষ চক্র আগে থেকেই জানতো, তারাই হয়তো পরিকল্পিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, যদি কেউ পরিকল্পিতভাবে শেয়ারের দাম বাড়ায়, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। এর সঙ্গে কোম্পানি জড়িত আছে কি না, সেটিও ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। কারণ কোম্পানি থেকে তথ্য ফাঁস না করলে কারও পক্ষে মূল্য সংবেদশীল তথ্য আগেই পাওয়া সম্ভব না।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। তার আগে ২০১৯ সালেও ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তবে ২০১৮ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৭ সালে ৩০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৬ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১৫ লাখ এক হাজার ৯২০টি। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার।