দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। বাজার ভাল হবে এ আশার বানী শুনতে শুনতে ক্লান্ত বিনিয়োগকারীরা। অধিকাংশ শেয়ারের দাম ক্রয়ের উপযোগী থাকলেও ক্রেতা সংকটে ভুগছে পুঁজিবাজার। এছাড়া পুঁজিবাজারের ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়ে না, এমন ইস্যুতেও টানা পতন দেখা গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সুশাসনের দিকে নজর না দিয়ে ‘সামনে বাজার ভালো হবে’ বলে বারবার বিনিয়োগকারীদের আশার বাণী শুনিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা।

তবে বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষার যেন শেষ নেই। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা লোন ও ধার করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এখন নি:স্ব হওয়ার পথে। হাউজ থেকে লোন করা বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও এখন ইক্যুইটি মাইনাস। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। বিপরীতে আর্থিকভাবে ভঙ্গুর, দুর্বল ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার রমরমা। এসব কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণির প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী। বিপরীতে পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

আলমগীর হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘সব প্রোগ্রামেই তো বিএসইসির কর্তারা বলেন সামনেই সব ঠিক হয়ে যাবে। পুঁজিবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে। কিন্তু কবে হবে? ভালো হওয়ার লক্ষণ তো দেখি না। অপেক্ষার শেষ কোথায়?

করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে গত বছরের জুলাইয়ের শেষে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়। এতে সাময়িকভাবে পতন রোধ করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

এদিকে সপ্তাহের চতৃর্থ কার্যদিবসে শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যদিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ৪ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪.৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৮২.৪৭ পয়েন্টে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.৫৮ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২.৩২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে একহাজার ৩৬৩.০৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৩৮.৫৫ পয়েন্টে।

ডিএসইর তথ্য মতে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস ডিএসইতে ৩১৮টি প্রতিষ্ঠানের ৭ কোটি ৪৯ লাখ ১২ হাজার ১৩৬টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডের হাত বদল হয়েছে। তাতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ৮৩ লাখ ২ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৩৮ কোটি ৭৩ লাখ ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে ৭১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৬৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এদিকে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০.২৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬০২.০০ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৫.৫৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৮.১৬ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ০.৪৮ পয়েন্ট এবং সিএসআই ১.৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১১৯.৪৯ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৬০.৮৫ পয়েন্টে, একহাজার ৩০৮.০৬ পয়েন্টে এবং একহাজার ১৬৯.৯৪ পয়েন্টে।

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সিএসইতে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ৪২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের। সিএসইতে ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।