দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বীমা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সম্প্রতি বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সব্বোর্চ কতজন পরিচালক থাকবেন আর মোট সংখ্যার কত জন হবেন নিরপক্ষে পরিচালক এ বিষয় সুনিদিষ্ট নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

এতে একটি বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সব্বোর্চ কতজন পরিচালক থাকবেন আর মোট কোন সংখ্যার কত জন হবেন নিরপেক্ষ পরিচালক এ বিষয় বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর করতে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়সহ দেশের সব বীমা কোম্পানির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। নীতিমালা অনুয়ারী বীমা কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদে মোট পরিচালক থাকবেন সর্ব্বোচ ২০ জন। এর মধ্যে দুইজন থাকবেন নিরপেক্ষ পরিচালক।

বিএসইসির মূখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: রেজাউল করিম বলেন, কোন বীমা কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হয় তাহলে ওই পর্ষদের ২০ জনের মধ্যে ৪ জন থাকতে হবে নিরপেক্ষ পরিচালক। চার জন না থাকলে বিএসইসি করপোরেট নীতিমালা লঙ্গন এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

বীমাকারী অর্থাৎ বীমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পেশাদারী, আর্থিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ও সুশাসন নিশ্চিতে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এতে বীমা কোম্পানিতে নতুন কতজন পরিচালক থাকবেন, কারা হতে পারবেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাদের কাজ কী হবে, দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার দায় তাদের উপর কতটুকু বর্তাবে এসব বিষয় উল্লেখ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

আইডিআরএ মুখপাত্র পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিয়ম কানুন আগেও ছিলো তবে সেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এখন সেগুলো এক জায়গায় আনা হয়েছে। চুড়ান্ত করার আগে এটিবে বাস্তবমুখী করতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। এছাড়া এ নীতিমালার মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তির ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমা সেবার পরিধি বিস্তৃত হবে। তবে নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, জীবন ও সম্পত্তির ঝুঁকি মোকাবিলায় বীমা সেবার পরিধি বিস্তৃতির লক্ষ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পেশাদারত্ব ও আর্থিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এতে বলা হয়, করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামোতে এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে যা প্রশাসনিক দায়িত্ব ও তদারকির মধ্যে উপযুক্ত সীমারেখা, দায়িত্বের সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য নীতিমালা, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার, স্টেকহোল্ডার ও বীমা গ্রাহকদের অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।

গাইডলাইনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মোট পরিচালকের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং এর মধ্যে ২ জন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে। এ ছাড়া পরিচালক নিয়োগ এবং পুনর্নিয়োগের সুস্পষ্ট পদ্ধতি থাকবে। আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করেনই এবং বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণখেলাপি সাব্যস্ত হননি এমন ব্যক্তি বীমা কোম্পানির পরিচালক হতে পারবে।

এছাড়া, কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি কিংবা কোনো জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত নন এমন ব্যক্তিও পরিচালক হতে পারবেন। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কোম্পানির নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন বলেও গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে, বাকি সদস্যরা পর্ষদ সভার জন্য চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণ কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করাসহ নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

প্রত্যেক পরিচালককে তার নিয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বীমা কোম্পানিতে নিজের ও নিকট আত্মীয়ের শেয়ারধারণের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে। পরিচালক নিজে কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।