দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলমান হরতাল-অবরোধের নামে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনে আগুন, রেলপথ কেটে মারাত্মক মৃত্যুফাঁদ তৈরির মতো নাশকতার পর দুর্বৃত্তরা এবার স্বাধীন বিচারালায়কে নাশকতার জন্য টার্গেট করেছে। এরই মধ্যে খুলনার পাইকগাছায় আদালতের এজলাসে দুর্বৃত্তদের আগুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদালত চত্বরের টেনিস কোর্টে ককটেল নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ ঘটানোর খবরে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা বলছেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী নয়, হরতাল-অবরোধের সঙ্গে জড়িত একটি চক্র এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। আবার কেউ বলছেন, নিরাপত্তার ঘাটতিজনিত কারণে সুযোগ বুঝে দুর্বৃত্তরা এসব নাশকতা ঘটাচ্ছে।

নাশকতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আদালতে হামলাকারীরা অন্য কেউ নয়, যারা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারাই পরিকল্পিতভাবে এসব নাশকতা করছে। বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং আতঙ্কের মধ্যে রাখতে তারা এসব ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যাত্রী পরিবহন এবং আদালতের মতো সুরক্ষিত স্থানে অগ্নিসংযোগ, ককটেল নিক্ষেপকারীরা জঙ্গি নয়, এরা শুধুই নাশকতাকারী। জঙ্গিদের হামলার ধরন এমন হয় না।’

তিনি বলেন, যারা হরতাল-অবরোধ করছে তারাই ভয়ংকর এসব নাশকতা করছে। সম্প্রতি আমরা কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। আদালত চত্বরে অগ্নিসংযোগ, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে নাশকতাকারীরা এসব কাজ করছে। আদালত প্রাঙ্গণের সুরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার পরও আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের ঘটনা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিষয়টির প্রতি অবহেলা না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোরভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। যারা এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী মো. সুমন মিয়া বলেন, আদালতের এজলাসে কিংবা আদালত চত্বরের আশপাশে এমন ন্যক্কারজনক নাশকতা সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল। তারই যেন নমুনা দেখতে পাচ্ছি খুলনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আদালতে নাশকতা খুবই দুঃখজনক। নিরাপত্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর হুমকি আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আল মঈন বলেন, সম্প্রতি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গিসহ ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুর্র্ধষ জঙ্গি হলেও তাদের পরিকল্পনায় এমন কিছু ছিল না। তাদের পরিকল্পনা ছিল আরও ভয়াবহ। যানবাহন বা রেললাইনে যারা নাশকতা চালাচ্ছে, তারাই আদালত ঘিরে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুর রহমান বলেন, রাজধানীসহ দেশের সব আদালত-ট্রাইব্যুনাল, বিচারকদের গাড়ি ও বাসভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও জেলা জজ আদালত এবং খুলনায় বোমা হামলা হয়েছে। আগেও কুমিল্লা আদালতে বিচারকের খাসকামরায় বিচারপ্রার্থীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোয় ফের বিচারকরা উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় দেশের সবগুলো আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, বিচারকদের বহনকারী গাড়ি এবং বাসভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি দেশের সবগুলো আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এবং বিচারকদের বহনকারী গাড়ি ও বাসভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।