দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের ৩২টি আসনে ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২৬টি আসনই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে ২৫টি আসন থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর একটি আসনে তারা আগে থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন বাদ রেখেছে। অপরদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলকে ৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ছাড় দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ আসনে তারা আগে থেকেই প্রার্থী দেয়নি। অন্য আসনগুলোতে শরিক দলের প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলেছে। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছ আওয়ামী লীগ।

আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দুই প্রভাবশালী প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বঞ্চিত হয়েছেন। তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও এবার আওয়ামী লীগের ছাড়ের মধ্যে নেই। এদিকে টানা তিন বার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহবুব আরা গিনিকে তার আসন ছাড় দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরে তিনটি আসন আগে ছেড়ে দিলেও এবার সেই তিনটি আসন নিজেদের দখলে রেখেছে।

অবশ্য ঢাকা-১৮ আসন নতুন করে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে। আসন ভাগাভাগিতে কিছুদিন আগে উপনির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী বাদ পড়েছেন। তারা হলেন: পটুয়াখালী-১ আসনের আফজাল হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মো. শাহজাহান। এই দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একাদশের উপনির্বাচনে জয়ী হলেও তারা সংসদে বসার সুযোগ এখনও পাননি।

শরিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জাসদকে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসনানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশারফ হোসেনকে ছাড় দিয়েছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ বাদে অন্য দুটি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টিকে বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় দিয়েছে। পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টিকে যেসব আসনে ছাড় দিয়েছে, সে গুলো হলো— ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মো. ইমদাদুল হককে প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, নীলফামারী-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফার পরিবর্তে জাতীয় পার্টির রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে মো. জাকির হোসেন বাবুলের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে রেজাউল করিম রাজুর পরিবর্তে জাতীয় পার্টির হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, রংপুর-৩ আসনে তুষার কান্তি মণ্ডলের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের,

কুড়িগ্রাম-১ আসনে মো. আছলাম হোসেন সওদাগারের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির এ কে এম মোস্তফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনে মো. জাফর আলীর পরিবর্তে জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-২ আসনে আফরুজা বারীর পরিবর্তে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ আসনে মাহবুব আরা গিনির পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মো. আব্দুর রশিদ সরকার।

এছাড়া বগুড়া-২ আসনে তৌহিদুর রহমান মানিকের পরিবর্তে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনে মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, সাতক্ষীরা-২ আসনে আসাদুজ্জমান বাবুর মো. আশরাফুজ্জামান, পটুয়াখালী-১ আসনে মো. আফজাল হোসেনের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, রবিশাল-৩ আসনে সরকার মো. খালেদ হোসেনের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু, পিরোজপুর-৩ আসনের মো. আশরাফুর রহমানের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মো. মাশরেকুল আজম (রবি),

ময়মনসিংহ-৮ আসনে মো. আব্দুল হাই আকন্দের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন (মুক্তি), ময়মনসিংহ-৮ আসনে আব্দুছ ছাত্তারের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মো. নাসিরুল ইসলাম খানের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মো. মজিবুল হক, মানিকগঞ্জ-১ আসনে মো. আব্দুস সালামের পরিবর্তে মোহা. জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-১৮ আসনে মোহাম্মদ হাবিব হাসানের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির শেরিফা কাদের, হবিগঞ্জ-১ আসনে ডা. মুশফিকুর হুসেন চৌধুরীর পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মো. শাহজাহান আলমের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মো. আবদুল হামিদ, ফেনী-৩ আসনে আবুল বাশারের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মোহাম্মদ আবদুস সালামের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে নোমান আল মাহমুদের পরিবর্তে জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কে এম এম নাসিম ওমসান জাতীয় পার্টির হয়ে ভোট করবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী নেই।

এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ১৬টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল ১৪ দল। এবার সংখ্যাটা একই রকম থাকবে বলে আশা করেছিলেন তারা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন শরিকরা।

জোট শরিকদের ৬ আসনের প্রার্থীরা হলেন: বগুড়া-৪ আসনে জাসদ প্রার্থী এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন, রাজশাহী-২ আসনে বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বরিশাল-২ বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আনোয়ার হোসেন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জাসদ প্রার্থী মোশারফ হোসেন।