বরিশাল ব্যুরো, দেশ প্রতিক্ষণ: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নিজ এলাকা বরিশালের বাবুগঞ্জ। তিনি এই উপজেলার বাহেরচর গ্রামের সন্তান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আব্দুর জব্বার খানের ছেলে। মেনন এখান থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নিজভূমিতেও নৌকার মনোনয়ন পায়নি তিনি।

তাই শেষমেশ বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে লড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়বেন তিনি। কিন্তু পুরনো বিরোধের সূত্র ধরে এই আসনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী মেননের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।

শুধু আওয়ামী লীগ নয় এ আসনে মেননের সঙ্গে পুরনো ‘হিসাব’ আছে জাতীয় পার্টিরও। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে মেননকে। বর্তমানে রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য। তবে এবার সেখানে নৌকার মনোনয়নপত্র পেয়েছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। মেনন এবার বরিশাল-২ ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রথমে তাকে বরিশাল-৩ আসন দেওয়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করে জানানো হয়, মেনন লড়বেন বরিশাল-২ আসন থেকে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, হঠাৎ করে আসন বদলানোর ঘটনায় তারা বিব্রত ও চিন্তিত। কারণ হিসেবে দলের নেতারা বলছেন- বরিশাল-২ আসনের দুই উপজেলা- উজিরপুর ও বানারীপাড়ায় ওয়ার্কার্স পার্টি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। এ ছাড়া পুরনো বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগের অনেকেই এখানে আন্তরিকভাবে কাজ করবে না। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বলছেন, রাশেদ খান মেনন নিজেও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কারণ বাবুগঞ্জ তার জন্মস্থান।

বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ আসনে নির্বাচন করতে চাননি। তার পছন্দের আসন ছিল বরিশাল-৩।’ এর আগে ১৯৯১ সালে তৎকালীন বাবুগঞ্জ ও উজিরপুর নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মেনন। ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির গোলাম ফারুক অভির কাছে হেরে যান। তার পর তিনি বরিশাল অঞ্চলে নির্বাচনে দাঁড়াননি।

বরিশাল-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস। কিন্তু শুক্রবার রাতে এ আসনে রাশেদ খান মেনন ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পাওয়ায় সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। তালুকদার ইউনুসকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ভালোভাবে নেননি। ফলে ভোটের মাঠে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়তে পারেন।

বানারীপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তালুকদার ইউনুস জয়ী হতেন। এখন সবার মন ভেঙে গেছে।’ বরিশাল-২ আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মণি এবং উপজেলা কমিটির সদস্য শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ইকবাল হোসেন তাপস। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী করা হয়েছে সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসকে।

২০০৩ সালে উজিরপুর উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাবু লাল শীল খুন হন। ওই হত্যা মামলায় উজিরপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের বর্তমান সভাপতি শিপন মোল্লা, উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দীন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ সিকদারসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরে তারা ওই মামলা থেকে খালাস পান। এ নিয়ে উজিরপুরে ওয়ার্কার্স পাটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পুরনো বিরোধ রয়েছে।

এর আগে ১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় রাশেদ খান মেননকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলে তিনি আহত হন। ওই ঘটনায় বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মণিকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই সময় বেশ কিছু দিন কারাভোগ করেন।
মনিরুল ইসলাম ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পিরোজপুর-২ (স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া) আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এর পর ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের অনেক ভোট মনিরুলের বাক্সে পড়তে পারে। বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন ছানা বলেন, দলীয় হাইকমান্ড থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাপারে শিথিলতা থাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।