স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  দুদিন আগেই শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এক হাজার ৯৭১ প্রার্থীর লড়াইয়ে ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে ২৯৮ জয়ীর নাম। এর মধ্যে ২২২ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা অর্জন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সরকার গঠনের পালা। সবার চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া এবারের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসছেন কারা, কারাই বা পড়ছেন বাদ, কে পাচ্ছেন কোন দপ্তর এসব নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ ও আলোচনা। রদবদলে কেমন দাঁড়াবে নতুন মন্ত্রিসভার চেহারা, চলছে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এ শপথের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে এবারসহ পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, শপথ অনুষ্ঠানে তিন বাহনীর প্রধান, সচিব, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত, দেশে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও মিশন প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া সরকারি ফলের গেজেট প্রকাশের পর গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় সংসদ ভবনের নিচতলা শপথকক্ষে নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় এমন ব্যক্তিরাই নতুন মন্ত্রিসভায় প্রাধান্য পেতে পারেন, যারা সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। তাছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় তরুণ ও জ্যেষ্ঠ বঞ্চিত নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হতে পারে।

এদিকে বর্তমান মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন। ফলে তাদের দপ্তরে নিশ্চিতভাবে দেখা যাবে নতুন মুখ। এছাড়া বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কয়েকজনের প্রতিও বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী। তাদের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে কেউ কেউ ছিটকে পড়তে পারেন নতুন মন্ত্রিসভা থেকে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। আর নতুন করে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এরই মধ্যে অনেকে ফোন কল পেয়েছেন। তাদের মধ্যে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম,

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক,নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী,শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়। বঙ্গভবনের শপথ নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন পেয়েছেন তারা।

এছাড়া নতুন মুখের মধ্যে রয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম, মো. এ আরাফাত, সাজ্জাদুল হাসান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ড. সেলিম মাহমুদ, আবুল কালাম আজাদ। জাহাঙ্গীর কবির নানক ফোন পেয়েছেন বলেও জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এর আগে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ।

২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে।

গত বুধবার সকালে শপথ নিয়েছেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। বুধবার সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।