দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে ডলার সংকট কাটতে শুরু করেছে। রিজার্ভও পুনর্গঠন হতে শুরু করেছে। নতুন বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা প্রয়োগের ইতিবাচক প্রভাব কাজ করতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্যক্তির হাতে থাকা নগদ ডলার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ও ভালো হয়েছে। রিজার্ভ পুনর্গঠন হতে শুরু করেছে। আগামী দিনে ডলার সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিতিশীলতা কেটে যাচ্ছে। ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা ও সরকারের সহযোগিতা পরিস্থিতির এ পরিবর্তনে সাবলীল গতি এনে দিয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস বা মোট রিজার্ভ ২ হাজার ৬৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। মোট রিজার্ভ গত নভেম্বর মাসে ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে যায়। ওই মাসে নিট রিজার্ভ কমে হয় ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারে।

গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পরপর রপ্তানি আয় হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের ঘরে। এ দুই মাসে রেমিট্যান্স আয় হয় ২০০ কোটি করে ৪০০ কোটি ডলার। গত দুই বছর ধরে দেশে ডলারসংকট চলে আসছিল। গত বছরের মে-জুন থেকে এ সংকট প্রকট হতে শুরু করে। এ সময় আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভে টান পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলে আসছিলেন, আমদানি চাহিদা পূরণ করতে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করায় রিজার্ভের দ্রুত ক্ষয় হয়। এতে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব গবেষণা থেকে ডলারসংকট উত্তরণে নীতিমালা প্রয়োগ করা হয়।

গভর্নর বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাজারে গুজব ছড়িয়েছিল, ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাবে- এত টাকা, অত টাকা হবে। তাই অনেকে ডলার আনছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব গবেষণা ও নীতিমালা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসছে। এখন ডলারও ফিরতে শুরু করেছে। গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এখন আর খুব বেশি অবমূল্যায়ন হচ্ছে না। একধরনের স্থিতিশীলতা দেখছি আমরা। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এটি বজায় থাকবে।’

গভর্নর বলেন, মানুষের হাতে প্রচুর নগদ ডলার ছিল। এমনকি ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচেও রেখে দিয়েছেন। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমরা ব্যাংকে ডলার জমার সুযোগ সহজ করে দেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ নগদ ডলার জমা হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে।

গভর্নর বলেন, আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হিসাব বা আরএফসিডি হিসাবে যে কেউ ডলার জমা রাখতে পারছেন। ব্যাংক থেকে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না হিসাবধারীকে। একবার বিদেশে গেছেন এমন ব্যক্তিও একটি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারবেন এবং কেউ যদি চারবার বিদেশে যান তাহলে ৪০ হাজার ডলার জমা রাখার সুযোগ পাবেন।