আলমগীর হোসেন ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ ঢাকা : রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট। সহিংসতার শঙ্কা ও নানামুখী অভিযোগ নিয়েই ১৪১টি উপজেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। আনুষ্ঠানিক প্রচার সমাপ্ত হলেও শেষ মুহূর্তের নানা হিসাবনিকাশ মেলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা। ভোটের দিন ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কোনো অংশেই কম নয়। দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় প্রায় প্রতিটি উপজেলায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে প্রতিটি এলাকায়ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। আর এ কারণেই নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন উপজেলায় তৈরি হয়েছে সংঘাতের শঙ্কা। এরই মধ্যে প্রচারণার সময় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, প্রার্থীর ওপর হামলা ও প্রচারে বাধা দেওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। প্রথম ধাপের ভোট হবে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৪১টি উপজেলা পরিষদে। বলা চলে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। অনেক স্থানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। প্রার্থী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য “ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার” এর আওতায় ৬ থেকে ১০ মে পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট উপলক্ষে ৮ মে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। মোট চার ধাপের এই নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে তিন ধাপের ভোট ২৩, ২৯ মে ও ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি। প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে কয়েকটি উপজেলায় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং স্থগিত হওয়ায় ৮ মে ১৪০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি বলছে, দলের নিষেধাজ্ঞা না মানায় দল ওই নেতাদের বিরুদ্ধে কি সিদ্ধান্ত নিবে না নিবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে, সমালোচিত ওইসব মন্ত্রী-এমপির ওপর নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থীর পাশাপাশি বেপরোয়া ওইসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যেই বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ও বিতর্ক ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করেছে বর্তমান কমিশন। ওই নির্বাচনে সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রী- এমপিদেরও ছাড় দেয়নি ইসি। শোকজ, তলব, তিরস্কার ও মামলা করা হয় তাদের অনেকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কঠোর পদক্ষেপের পরও বাগে আনতে না পারা এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের মতো সর্বোচ্চ পদক্ষেপও নিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এবারের উপজেলা নির্বাচনেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ জোরালোভাবে আলোচনায় আসছে। গোয়েন্দা রিপোর্টেও উঠে আসছে মাঠের সেসব তথ্য। ফলে বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নির্বাচনের সেই ফর্মূলাই বেছে নিচ্ছে কমিশন।

সম্প্রতি ডিসি- এসপিসহ মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি। ওই বৈঠকে ডিসি-এসপিসহ অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নির্বাচনী মাঠের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় বেশিরভাগ বক্তাই মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন।
ইসি সূত্র জানায়, আজ বুধবার উপজেলায় প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের জন্য তাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। ভোটের দিন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে ব্যালট পেপার। প্রথম ধাপের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৪১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যও একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিবে ইসি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েকটি উপজেলার মধ্যে মাদারীপুরে উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান শফিক যান এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের অভিযোগ বরে বলেন, এমপি তার ভেলেকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার অরছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ওপর খবরদারি করছেন। কালো টাকা বিলির মাধ্যমে ভোট বেলার চেষ্টা, নির্বাচনের দায়িত্বে যারা কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ শফিক খানের নেতাকর্মীদের হামলা ও সমভীতি প্রদর্শন করছেন ।

অভিযোগ এসেছে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য ও ডি এম শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ওই উপজেলার অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অভিযোগ, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য ফিনাইগাতী উপজেলার চেয়ারম্যান, প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত। রায়ের পক্ষে পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছেন। চাঁদপুরের মতলন উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের। বিরুদ্ধে আচরনবিধি লঙ্গাম করে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। ও নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই উপজেলার একজন প্রার্থী।

তদ্দাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান করিমকে সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এ সভায় সরাসরি ভোট চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাফর আলম। এ-সংক্রান্ত একাধিক অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং স্কির চিত্রসহ নির্বাচন কমিশন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও তাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জাফর আলম।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও সুবর্ণচর উপজেলার চরজনার থানার ওসির বিরুদ্ধে বিস্তাবের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী (সেলিম)। অভিযোগে তিনি বলেন, একরামুল করিম চৌধুরীয় ছেলে চেয়ারম্যান আতাহার ইশরাক চৌধুরী সাবার ওরফে সাবার চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তিনি সুবর্ণানা উপজেলায় সের রাজত্ব কায়েম করে আসছেন।