টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনে অস্থির পুঁজিবাজার, ক্রেতা সংকটে হাহাকার
![](https://deshprotikhon.com/wp-content/uploads/2025/01/Dse-Cse-Dorpoton-3.jpg)
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পুরোনো পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে কিছুতেই টানা দরপতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। দিন যত যাচ্ছে শেয়ার বাজারে ক্রেতা সংকট ততো প্রকট হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর ফলে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনের কবলে পুঁজিবাজার। অব্যাহত এই দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে টানা দরপতনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেন ৩ শত কোটি ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা বেড়েই চলেছে। মুনাফার আশায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমনটিই যেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নিয়তি। মাঝে মধ্যে কিছুটা সূচকের ওঠানামা থাকলেও হতাশা যেন এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তি শ্রেণি এবং বিদেশী সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা হতাশ এখানে বিনিয়োগ করে। ফলে কবে নাগাদ বাজার বাজার ভাল হবে এ অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস উভয় পুঁজিবাজারে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও শেষ দুই কার্যদিবস সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম চার কার্যদিবসেও দরপতনের লেনদেন শেষ হয়েছে। এর ফলে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
গ্লোব সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি বাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হচ্ছে। এ ভাবে আর কত দিন চলবে। একটি দেশের পুঁজিবাজার এ ভাবে চলতে পারে। আর আমাদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজির প্রায় ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। কবে এই লোকসান থেকে বের হব সেই টেনশনে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বর্তমান পতনের পেছনে বড় কোন কারণ নেই। তবে অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া মন্দা পরিস্থিতি ঘনীভূত হয়েছে। তবে পুঁজিবাজারের মন্দাভাব ধীরে ধীরে কেটে যাবে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে।
এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে টাকার পরিমানে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১১২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক .৬৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯৬ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৪ টির, দর কমেছে ২০৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫ টির। ডিএসইতে ৩১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৩ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৩২ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯৭ টির এবং ২৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।