এক বছরে শ্যামপুর সুগার দাম বাড়ছে চার গুন!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি শ্যামপুর সুগারের লোকসান আর দেনায় জর্জরিত। অথচ শেয়ারেরটির দাম গত এক বছরের ব্যবধানে চারগুনের বেশি দাম বাড়ছে। যেকোন বিনিয়োগকারী এ শেয়ার এক বছর আগে কিনছে, বর্তমান তার পোর্টফোলিওতে লাভ চারগুন।
এটা কেন ব্যবসায় ক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও শেয়ার ব্যবসায় সম্ভব। অথচ চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শ্যামপুর সুগার মিলসের ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা। গত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৭০ টাকার বেশি। এ হিসাব শুধু এক বছরের নয়, বহু বছরের।
অথচ সাম্প্রতিক দেড় বছরে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও উত্থান দেখে এর আর্থিক দুর্দশার চিত্র বোঝার উপায় নেই। কারণ গত এক মাসেরও কম সময়ে শেয়ারটির দর বেড়ে সোয়া দুই গুণ হয়েছে। দেড় বছরে হয়েছে ১০ গুণ।
স্বল্পমুলধনী কোম্পানি হওয়ার একটি চক্র এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বছরের পর বছর কারসাজি করে যাচ্ছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ শেয়ারে চোখ পড়ছে না। আজই একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি। কয়দিন পর পর শেয়ার দর বাড়ার কারন কি জানতে চায়, আর কোম্পানির পক্ষ থেকে গৎবাধাঁ উত্তর দেয় দর বাড়ার কোন কারন নেই। এ হলো আমাদের পুঁজিবাজারের চিত্র। অথচ ভাল মৌল ভিত্তি কোন শেয়ারের দাম বাড়ছে না।
এ কোম্পানির শেয়ারদরের উল্লম্ম্ফনের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৯ই এপ্রিল শেয়ারের দাম ছিল ১৬.৪০ টাকা থেকে টানা দর বেড়ে এক মাথায় ৬৯.৫০ টাকায় উঠানামা করে।
গত ১৩ নভেম্বরও শেয়ারটি ২৫ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। গত বছরের জুলাই মাসে কেনাবেচা হয় মাত্র ছয় টাকায়। শুধু শ্যামপুর সুগার নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তালিকাভুক্ত আরেক চিনিকল জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারদর বৃদ্ধির ধারা আরও বেশি। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ কোম্পানিও ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ১৫ টাকা ৬২ পয়সা লোকসান করেছে।
বাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, স্রেফ কারসাজির কারণে শেয়ারটি দর বাড়ছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কারসাজি বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ কারণে শেয়ারগুলোর দরের উল্লম্ম্ফনও থামছে না। বরং সংশ্নিষ্টরা বিপুল উৎসাহে কারসাজিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে এ দুই কোম্পানিসহ সাত রুগ্ণ কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছিল বিএসইসি। প্রায় এক বছরেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা আসেনি। তদন্ত শেষে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েক বছর পার হয়ে যায়, এটা একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তার। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি করার খবর এখন দরবৃদ্ধি ঠেকাতে পারে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বছরের সবচেয়ে বেশি মুনাফা দিলেও এক কোম্পানির কোন ভিত্তি নেই, রাষ্টায়ত্ত কোম্পানি হওয়ায় ওটিসিতে যাচ্ছে না। গত এক বছরে যে সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার কথা, সে সব কোম্পানির দাম না বেড়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম বেড়েই চলছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা তেমন কিছুতো দেখিছি না।
শ্যামপুর সুগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মাহমুদুল হক বলেন, ‘কী কারণে দর বাড়ছে, বিষয়টি আমরাও জানি নেই।’ আপনাদের কোম্পানির শেয়ার বছরের সেরা দাম বৃদ্ধির প্রথম তালিকায় এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কি করে বলবো এত দাম বাড়ছে। এ বিষয় আমি কিছুই জানি না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ার দর বছর জুড়েই বাড়ছে। আর তখন স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হলে কোম্পানির পক্ষে দর বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে সারা বছর জানায়। তাই নোটিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দেন তারা।
এছাড়া কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা।
কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে সরকারের কাছে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার আছে।