দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: এখন অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ বন্ড, ডিবেঞ্চার ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের আরও অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তেমনি অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাদ দিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবায়ন করা হবে। এর ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়াগ বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন এনে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবায়নে পরিবর্তন এনে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত সার্কুলারে পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, রূপান্তরযোগ্য নয় এমন কিউমুলেটিভ প্রেফারেন্স শেয়ার, অরূপান্তরযোগ্য বন্ড, ডিবেঞ্চার ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ (একক ও সমন্বিত) হিসাবায়নে অন্তর্ভুক্ত হবে না।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ ও ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ছয় বছর পর পুঁজিবাজরে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনার ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন আনল বাংলাদেশ ব্যাংক।

পুঁজিবাজার পরিস্থিতির মন্দার কারণে সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনায় পরিবর্তনের কথা বলেন। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা পুনর্বিবেচনার আশ^াস দেন গভর্নর ফজলে কবির।

তবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে হিসাব করতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ব্যাংকের কৌশলগত বিনিয়োগও হিসাবায়নের বাইরে রাখার দাবি ছিল।

ব্যাংকগুলো বর্তমানে রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। রেগুলেটরি মূলধনের মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত মূলধন, অবণ্টিত মুনাফা, প্রিমিয়াম আয় ও বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি। এতদিন ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণে ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হতো।

এ ছাড়া সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহককে দেওয়া মার্জিন ঋণের স্থিতি ও ভবিষ্যৎ মূলধন প্রবাহ বা শেয়ার ইস্যুর বিপরীতে বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া ব্রিজ ঋণও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ব্যাংকের সহযোগী কোম্পানিকে (মার্চেন্ট ব্যাংক/ব্রোকারেজ হাউস) দেওয়া মূলধন এ সীমার বাইরে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের দরপতনের পর চলতি বছরের শুরুতে সাময়িক ঊর্ধ্বগতি হলেও গত ২৭ জানুয়ারি থেকে টানা ১৩ সপ্তাহের রেকর্ড দরপতনের মধ্যে পড়ে পুঁজিবাজার। তারল্য সংকটের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন নেমে এসেছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব), প্লেসমেন্টসহ বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইনে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এসইসি।