বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা সংকটে হাহাকার পুঁজিবাজার
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিনও বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা সংকটে হাহাকার করছে পুঁজিবাজার। ফলে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। কোন পথে হাঁটছে পুঁজিবাজার এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার ইস্যুতে নিরব আচরণ করছেন।
দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ততই শেষ হয়েছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজির ৭০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। আর যাদের লোনে বিনিয়োগ রয়েছেন তারা এখন ফোর্স সেলের মুখে। ফলে মুল পুঁজি আদৌও ফিরে পাবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদেরকে নানা আশার বানী দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করালে এখন নিরব আচরন করছেন। আমাদের পুঁজি শেষের পথে। আমাদেরকে বাঁচান বলে নানা আকুর্তি করতে থাকেন।
স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগে পুঁজিবাজার ইস্যুতে নানা বয়ান করলেও এখন নিরব ভুমিকা পালন করছেন। আমি গত এপ্রিল মাসে পুঁজিবাজার ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। আমার বর্তমান পুঁজি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এসেছে। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, আমি এক বছর আগে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছি। বর্তমানে আমার পুঁজি ১ লাখ টাকায় এসেছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এটা পুঁজিবাজার নয়, এটা কারসাজি বাজার।
এদিকে আজ দিন শেষে ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৮ পয়েন্টে। সূচক এর চেয়ে কম ছিল গত ১৪ আগস্ট, ৬ হাজার ১৭৫ পয়েন্ট। গত ২৪ অক্টোবর কারিগরি জটিলতায় কয়েক ঘণ্টা লেনদেন বন্ধের দিনটি বাদ দিলে গত ২৪ জুলাইয়ের পর সবচেয়ে কম টাকার শেয়ার হাতবদল হলো। আর যেসব কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের বেশি রয়েছে, সেগুলোর শেয়ারদর এখন ক্রমাগত কমছে।
যেসব কোম্পানির দর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে বিস্ময় জাগাচ্ছিল, সেগুলোর দরই কমছে বেশি। তবে দাম কমলে শেয়ারের চাহিদা বাড়বে এমনটি নয়। ক্রেতা নেই বললেই চলে, এ কারণে লেনদেন নেমেছে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে, গতিশীল পুঁজিবাজারে এক ঘণ্টাতেই এর চেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয়।
অর্থনীতি নিয়ে সামগ্রিক যে উদ্বেগ, তার পাশাপাশি নানা গুজব, গুঞ্জনের প্রভাবও পুঁজিবাজারে। সব মিলিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কমছে শেয়ারদর ও সূচক।
জানা গেছে, আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৫.১৬ পয়েন্ট বা ০.৫৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২১৮.৩২ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১১.৩০ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৫.৫৩ পয়েন্ট বা ০.৭০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৭.৪৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৮৩.০৪ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ ৫৬০ কোটি ৯২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার।
ডিএসইতে আজ ৩১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৪টির বা ৭.৫২ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ৬১টির বা ১৯.১২ শতাংশের এবং ২৩৪টির বা ৭৩.৩৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৮.৭৩ পয়েন্ট বা ০.২৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৮২.১১ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ১৩০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৪৭টির আর ৬৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।