কলকাতা: ভারতে ক কলকাতায় তোলপাড়লকাতায় গণধর্ষণের শিকার কিশোরী অপমানে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পর তার লাশ দ্রুত সৎকার করতে চাইছে পুলিশ। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে বলে কিশোরীর পরিবার অভিযোগ করছে।

রাতভর লাশ নিয়ে টানাপোড়েনের পর বুধবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নিমতলা শ্মশান চত্বর। পরিবার রাজি না হওয়ায় তার লাশ নিয়ে এখনো পুলিশ ও পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। পরিবারের সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে দ্রুত সৎকার করাতে চাইছে পুলিশ। কিন্তু কিশোরীর পরিবার তা মানতে নারাজ। সৎকারের জন্য কিশোরীর লাশ আজ বুধবার ফের নিমতলা শ্মশানে আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার পুলিশ যেভাবে লাশ ছিনতাই করেছে বুধবার সকালেও তার নিন্দায় সরব হয়েছেন শ্মশান চত্বরের মানুষ। কয়েকজন বিক্ষোভও দেখান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শ্মশান চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিশোরীর সৎকার সেরে ফেলতে মরিয়া পুলিশ।

অন্যদিকে তা আটকাতে মরিয়াও পরিবার। দুপক্ষের টানাপোড়েনে শ্মশান চত্বরে পড়ে রয়েছে কিশোরীর লাশ।মঙ্গলবার বাড়ি থেকে পিস হাভেনে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ লাশ ছিনিয়ে নিয়ে শ্মশানে নেয়।

বছরের শেষদিন মধ্যম গ্রামের নির্যাতিতার মৃত্যু হয়। আরজিকরে ভর্তি ছিল এই কিশোরী। ধর্ষণের অভিযোগ তোলার জন্য একটানা হুমকি এবং কুৎসা সহ্য করতে না পেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে গণধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছিল এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর এলাকায়।

বাবা অসুস্থ বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে গত ২৫ অক্টোবর মধ্যেম গ্রামে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে কয়েকজন যুবক। পরদিন থানায় অভিযোগ জানায় কিশোরীর পরিবার। কিশোরীর মেডিকেল টেস্টও করা হয়। টেস্ট সেরে ফেরার পথে তুলে নিয়ে গিয়ে ফের ধর্ষণ করা হয় কিশোরীকে। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

এরপর থেকে ধৃত দুষ্কৃতদের সঙ্গীরা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য ক্রমাগত হমকি দিতে থাকে ওই পরিবারকে। আতঙ্কে মধ্যম গ্রাম ছেড়ে এয়ারপোর্ট ২ নম্বর গেটের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে পরিবার। সেখানেও নিষ্কৃতি পায়নি ধর্ষিতার পরিবার ধর্ষকদের হাত থেকে।

অভিযোগ তোলার জন্য ক্রমাগত হুমকি দেয়া হয় পরিবারকে। একইসঙ্গে কিশোরীর নামে কুৎসা ছড়ানোর কাজ চলতে থাকে। ওই পরিবারের বাড়িতে হানা দেয় ধর্ষকরা। হুমকির পাশাপাশি চলে কুৎসা। অসম্মান সহ্য করতে না পেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আরজিকরে ভর্তি করা হয় তাকে।

চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগে আরজিকর হাসপাতালের সুপার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন নির্যাতিতার বাবা।তার অভিযোগ, বার্ন ইউনিট না থাকা সত্ত্বেও আরজিকরে ফেলে রাখা হয়েছিল নির্যাতিতাকে। সরকারের তরফে কোনো সাহায্যই পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে মধ্যম গ্রামের নির্যাতিতার। কলকাতার সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিনতি ঘোষও এমন অভিযোগ করলেন। তার অভিযোগ, এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করার জন্য বারবার ডেপুটেশন দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

নারীর মর্যাদায় আঘাত হানতে চাইছে বর্তমান সরকার। পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি থেকে মধ্যম গ্রামের ঘটনা তারই প্রমাণ। এই ভাষাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিআইএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী।

মধ্যম গ্রামের নির্যাতিতার মৃত্যুর ঘটনার নিন্দায় সরব কলকাতার  বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে প্রশাসনের আরো সতর্ক থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রশিল্পী সমীর আইচ।নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলছেন, এই ঘটনার পর দোষীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত আরো জোরদার করা উচিত প্রশাসনের।

প্রসঙ্গত, ভারতে গত বছর ধর্ষণের ব্যাপক ঘটনা ঘটে এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারা ভারতজুড়ে আন্দোলন গড়ে উঠে।