টেলিটক আমাদের ফোনস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্টায়ত্ত্ব মোবাইল কোম্পানী টেলিটকের গ্রাহক দিন দিন কমে যাচ্ছে। কি কারণে গ্রাহকেরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তা কোম্পানী জেনেও নিরবতা পালন করছে। টেলিখাতে সরকার প্রতিবছর বাজেট থেকে বড় অংকের টাকা বরাদ্দ রাখলেও সেবা দানের ক্ষেত্রে নিম্নমানের।

তাদের সেবা দানের মান এমন করুন হওয়ার কারণ গ্রাহকেরা জানতে চায়। তাহলে বাজেটের বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে কোম্পানীর কর্মকর্তারা কি করে।তারা গ্রাহক সেবার মান না বাড়িয়ে তাদের নিজেদের পকেটের মান বাড়ায় বলে দাবী করেছ গ্রাহকেরা।

জানা গেছে টেলিটকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে দিন দিন গ্রাহকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা গ্রাহকের সেবা দানের পরিবর্তে নিজেদের সেবা দানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যে কারণে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রয়াত্ব মোবাইল কোম্পানী দুর্নিতিতে ছেয়ে গেছে। এ কারণে দুদকে‘র সুদৃষ্টি কামনা করছে টেলিটকের গ্রাহকেরা।

এই কোম্পানী সর্বপ্রথম গ্রাহক সেবা প্রদান ও গ্রাহক ধরে রাখার ক্ষেত্রে দেশের মোবাইলে নতুন মাত্রায় চালু করেছিলেন থ্রিজি সেবা। কিন্তু বেসরকারী মোবাইল কোম্পানীগুলো যখন থ্রিজি চালুর অনুমতি পেলেন ঠিক তখন থেকে টেলিটকের থ্রিজি সিমকার্ড গ্রাহকেরা ব্যবহার করা থেকে নিজেদের বিরত রাখছেন।

দেশের একমাত্র রাষ্টায়ত্ত্ব মোবাইল অপারেটর কোম্পানিটি উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবার কথা বললেও দিতে পারছে না স্বাভাবিক সেবা। বেসরকারি অপারেটরদের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য এক বছর আগে টেলিটক থ্রিজি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু এক বছর পরে অন্যান্য অপারেটররা থ্রিজি চালুর সাথে সাথেই থ্রিজির পাশাপাশি অন্যান্য ধরণের গ্রাহক সেবার মান কমে গেছে টেলিটকের। এমনকি গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে কল করেও কোন ধরণের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন টেলিটক থ্রিজি’র গ্রাহকরা।

এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে টেলিটক মর্ডেম থেকে কোন কাজই করাই যাচ্ছে না। ডিভাইসটি কানেক্ট করার সাথে সাথেই আবার ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে আলি আকবর ও জুনায়েদ নামের টেলিটক কর্মকর্তাদের কাছে এর সমাধান চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা ব্যাপারটি দেখছি বলে জানালেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।

এ বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের প্রথমদিন থেকে থ্রিজি সেবা চালু করেছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, এয়ালটেল ও রবি। সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে নিলামে এই চারটি অপারেটর থ্রিজি লাইসেন্স পেয়েছে।

লাইন্সেস পাওয়ার পরে ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রবি আজিয়াটা, ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার গ্রামীণফোন ও ২ অক্টোবর বুধবার এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড থ্রিজি সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে। অপারেটরগুলো সীমিত আকারে ঢাকা ও চট্টগামে থ্রিজি সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে।

বেসরকারি অপারেটররা যখন থ্রিজি চালু শুরু করেছে, তখন টেলিটকের থ্রিজি সেবা প্রায় অচল। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, বেসরকারি অপরারেটরগুলোর থ্রিজি লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকেই টেলিটকের সেবার মান ক্রমেই খারাপ হয়েছে। টেলিটক মোবাইল সার্ভিসে ল্যান্ড ফোনের মানের কথা বলার সুযোগ থাকলেও নেটের অভাবে বিরক্ত গ্রাহকরা।

নিজেদের সমস্যার কথাও কোথাও বলতে পারছে না তারা। কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসে কল করলেও কল ধরছে না কেউ। টেলিটকের এই বিপর্যয়ের পেছনে টেলিটকের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিই দায়ী বলে গ্রাহকরা সন্দেহ করছেন। তাদের অনুমান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা অন্যান্য অপারেটর থেকে ‘টাকা খেয়ে’ টেলিটককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলক থ্রিজি সেবা চালু করে টেলিটক। থ্রিজি চালুর পর টেলিটকের গ্রাহক বেড়েছে পাঁচ লাখ। এখন টেলিটকের মোট গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখের ওপরে। এর আগে ২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর হিসেবে চালু হয় টেলিটক।

শুরুতে এর সিম পেতে মারামারির ঘটনাও ঘটে। পরের ইতিহাস খুবই করুণ। গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, সেবার মান বৃদ্ধিসহ নানা ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি দেশের মালিকানায় থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে গ্রাহক টেলিটকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার স্বার্থে এক বছর আগে টেলিটককে থ্রিজি সেবা চালুর অনুমতি দেয় সরকার। টেলিটক সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু বেসরকারি অপারেটরগুলোর থ্রিজি চালুর পর থেকে টেলিটক আবারো সেই শুরুর জায়গায় ফিরে গেছে।

গ্রাহকদের পর্যবেক্ষণ, যতদিন বেসরকারি মোবাইল অপারেটররা থ্রিজি লাইন্সেস পায়নি, ততোদিন টেলিটকের সেবা এত বাজে ছিল না। কিন্তু বেসরকারি অপারেটররা থ্রিজির লাইন্সেস পাওয়ার পর থেকেই টেলিটকের সেবার মান শুরুর থেকেও খারাপ হয়ে গেছে।

প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থ্রিজি চালু করে টেলিটক। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের ১ তারিখে সারা দেশে থ্রিজি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল টেলিটক। টেলিটক যখন সারা দেশে নতুন করে থ্রিজি সেবা চালুর কথা বলছে, তখন ঢাকা ও চট্টগামের গ্রাহকরা টেলিটকের কোন সেবাই পাচ্ছে না। থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নয়ই, নেই সাধারণ কথা বলার নেটওয়ার্কও।

অথচ থ্রিজি চালু হলে ডিফল্ট হিসেবে ইন্টারনেট স্পিড থাকবে ৫১২ কিলোবিট এবং বান্ডিল প্যাকেজে তা ২ মেগাবিট পর্যন্ত পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল টেলিটক। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কোন সময়ই টেলিটকের গতিসীমা এর ধারে কাছেও ছিল না। এমনকি অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা যে গতিমাত্রায় ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে, থ্রিজি পাওয়ার পরেও টেলিটকের গতি সেখানেই আটকে থাকে।

সেই গতিও হ্রাস পায় থ্রিজি নিলামে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল লাইসেন্স পাওয়ার পরে। টেলিটক মোবাইলে টেলিভিশন চ্যানেল দেখানোর স্বপ্ন দেখালেও বাস্তবে তা অধরাই রয়ে গেছে। টেলিটকের নিজস্ব সেবা কেন্দ্র ১১১ এ কল করেও কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। একাধিকবার কল করার পরেও টেলিটকের কোন ব্যক্তি কল ধরেননি।

তবে এই সমস্যার কেবল টেলিটকের খারাপ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে দুষতে অনিচ্ছুক গ্রাহকরা। টেলিটকের হিসাব মতে, সারা দেশে এখন টেলিটকের মোট বিটিএসের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। নেটওয়ার্ক হিসেবে যা খুবই শক্তিশালী। এছাড়া টেলিটকের সুইচিং ক্যাপাসিটি আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করা হয়েছে। সব লিংক আপগ্রেড করা হয়েছে। টেলিটকের ভয়েস কোয়ালিটি ল্যান্ডফোনের কাছাকাছি চলে এসেছে, যা অন্য অপারেটররা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি