১৮ দলের লগস্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতাল ক্ষমতাসীনদের দশম জাতীয সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। দেশে-বিদেশের জনমতকে উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ললাটে কলঙ্কের তিলক পড়লেও সরকারী দল খোশ মেজাজেই আছে।

এখন নতুন সরকার গঠনের তোড়জোরের পাশাপাশি চলছে বিরোধী জোটকে ঘায়েলে ফন্দি-ফিকির অন্বেষণ। এরই অংশ হিসেবে মামলা জটে আটকে বিরোধী জোটকে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েছে সরকার।

আর এ জন্য মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত ব্যাপক হারে মামলা দায়েরের চিন্তাভাবনা চলছে। তাছাড়া বিরোধী দলের ডাকা যে কোন কর্মসূচি কঠোরভাবে মোকাবেলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের পরে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সহিংসতা বন্ধ করুন। যে কোন সহিংসতা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।

এদিকে নির্বাচন শেষে রোববারই যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সহিংসতা কঠোরভাবে মোকাবেলার কথা বলেন। একই হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু।

এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের দুই দিনের মাথায় মঙ্গলবার বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করা হয়েছে। তবে আটকের পরে আবার কয়েকজনকে ছেড়েও দেয় পুলিশ।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে সহিংসতার কোন ঘটনা ঘটলেই বিরোধী জোটের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকশ’ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এতদিন পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করলেও এ অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন থেকে এসব ঘটনায় মামলা করবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। এছাড়া সম্ভাব্যক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে দিয়েও মামলা করার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে।

দরকার হলে আওয়ামীলীগ নিজেরা সহিংসতা করেও মামলা করবে। তবে এগুলো হবে কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার বগুড়ার শাজাহানপুরে। আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলার সুজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান নিজেই স্কুলের আসবাবপত্রে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আর এ ঘটনার মাধ্যমে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করার পরিকল্পনা ছিল তার। তবে তিনি ধরা পড়ে যাওয়ায় তা আর করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে রাজধানীর শাহবাগে থানার পাশেই বিহঙ্গ পরিবহনে রহস্য জনকভাবে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো। সেখানে পুড়ে মারা যায় বেশ কয়েকজন যাত্রী। ঘটনার পরপরই বিএনপি-জামায়াত জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের আসামি করে মামলা করা হয়। তবে সেই বাসটি আওয়ামীলীগ নেতা পঙ্কজ দেবনাথের বলে জানা যায়। কিন্তু সেই ঘটনার প্রকৃত রহস্য এখনো উদঘাটন করা হয়নি।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙা উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় বিরোধী দলের অজ্ঞাত ৬শ’ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।

এছাড়া সারা দেশেই বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের আটক করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এমনই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পর দিন যশোরে বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকেই সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এ ঘটনার সাথে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। ঘটনার পর বিরোধী জোটের কয়েক জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামালা করা হয়েছে।

তবে এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন এবং বিবৃতি দিয়ে এর সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা নাকচ করা হয়েছে। সেই সাথে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে দলটি।

এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি ৫ জানুয়ারির এ নির্বাচন। নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও ৫৪ জাতির সংস্থা কমনওয়েলথ তাদের হতাশা ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।

আর জাতিসঙ্ঘ নির্বাচনকে ‘বিভক্তি ও কম অংশগ্রহণমূলক’ বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সাড়া দিয়ে শিগগিরই অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন না পেয়ে এখন বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট জনরা।