বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক: ফখরুল
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “১২ জানুয়ারি যে সরকার গঠিত হবে, তা হবে প্রতিনিধিত্বহীন স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক সরকার। সারা দেশের মানুষ ইতিমধ্যে ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে ত্যাগ করেছে।
তাই এই সরকার কখনোই দেশে-বিদেশে বৈধতা পাবেনা। সরকার বাকশালী শাসন কায়েমের জন্য পায়তারা করছে।দেশের জনগণ এখন যথেষ্ট সচেতন।সরকারের উচিত হবে পুনরায় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্র এখন একজন ব্যক্তির একগুঁয়ে আচরণের কাছে জিম্মি। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে শুধু প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।” ১৯৭৫ সালে সংসদকে ব্যবহার করে এভাবেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করার অপচেষ্টা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ থেকে শুরু করে রোববার নতুন সরকারের শপথ নিতে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক বলে মত দিয়েছেন সংবিধান বিশেজ্ঞরা। আর এর দায় নির্বাচন কমিশন, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতির ওপর বর্তাবে বলে অভিমত দিয়েছেন রাজনীতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, উদ্ভট, অভিনব, হাস্যকর কায়দায় জাতীয় পার্টিকে কখনো বিরোধী দল, কখনো সরকারের অংশীদার হিসেবে দেখিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে বিরোধী দলের প্রতি হুমকি-হুঁশিয়ারিতে গণতান্ত্রিক আচরণের লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “সমঝোতা, সহনশীলতার পথ তিনি (হাসিনা) চেনেন না। কলঙ্কিত, লজ্জাকর, ধিকৃত প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে মিথ্যাচার করে তিনি এখনো অহংকার ও দাম্ভিকতা দিয়ে সামনের দিনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চান। গণতন্ত্রকে হত্যা করে কোনো স্বৈরাচারী একনায়কই জনগণের সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়নি, আওয়ামী লীগও সক্ষম হবে না।”
১২ জানুয়ারি গঠিত হতে যাওয়া সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্বশালী হবে না এবং নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা পাবে না কোনো মহল থেকে, এ কথা সরকারকে আবার স্মরণ করিয়ে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করাই হবে আওয়ামী লীগের জন্য উত্তম। অন্যথায় জনগণ তাদের ন্যায়সংগত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে।
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করে নির্বাচনের তামাশা থেকে জনদৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাইছে সরকার, এমন দাবি করে ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু ও বিরোধী দলের বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। ইতিমধ্যে তা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। এটা তাদের (সরকারি দল) কৌশল। একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “সরকার বিরোধী দলের ওপর নজীরবিহীন নির্যাতন শুরু করেছে। সরকারি হিসাবেই প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ নিরীহ মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে বিনা কারণে ছয় মাস থেকে এক বছরের সাজা দেয়া হয়েছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে দিয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশে হয়রানির সব অপকৌশল গ্রহণ করেছে সরকার।” কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এই হীন কৌশল গণতন্ত্রকামী মানুষ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।