দ্য-টেলিগ্রাফস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসকারী বাঙালিদের নিয়ে একটি আলাদা জাতিরাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে চীন তাতে সমর্থন দিতে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে। চীনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল সোমবার প্রকাশিত নিবন্ধটিতে এ আশঙ্কা করা হয়।

নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, ওই গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যদি এই উদ্যোগ সম্ভব না হয়, তাহলে বাংলাদেশের পাশে বাঙালিদের আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে ভারতের কর্তৃত্ব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে। এই বিভাজনপ্রক্রিয়া ঘটাতে পারলে তিব্বতের ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ফিরে পাওয়ার আশা করতে পারবে চীন, তারা এই এলাকাকে নিজেদের বলেই দাবি করে আসছে।

‘স্টে ইউনাইটেড’ শিরোনামের ওই নিবন্ধের লেখক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি দার্জিলিং সমস্যা নিয়ে সেখানকার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ও সংসদ সদস্য যশবন্ত সিংয়ের দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নিবন্ধের সূচনা করেছেন। এতে বলা হয়, স্বাধীন ভারতে বিখ্যাত ব্যক্তিরা অনেকেই প্রায়ই এমন সব মন্তব্য করে থাকেন, যার পরিণামের বিষয়টি তাঁরা উপলব্ধি করেন না। যশবন্ত সিং দার্জিলিংকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘দিল্লি ও কলকাতার প্রশাসকদের বোঝা উচিত, দার্জিলিংয়ের মানুষ কোনোভাবেই বাঙালি নয় এবং বাঙালি হিসেবে তাদের চিরকাল বাংলার সঙ্গে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে না।’ নিবন্ধে আরো বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দার্জিলিংকে বাংলার বাইরে যেতে না দেওয়ার পদক্ষেপ সম্পর্কে যশবন্ত সিং ‘বঙ্গভঙ্গ’-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এই শব্দটি নিয়ে বাংলার মানুষের মধ্যে অন্য এক মানসিকতা কাজ করে। লর্ড কার্জনের সময়ে এবং পরে ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘটনা বাংলার বুকে এক গভীর ছাপ ফেলেছিল বলে মন্তব্য করেন বিজেপির এই নেতা।

নিবন্ধে অভিজিৎ ভট্টাচার্য লেখেন, বেশির ভাগ মানুষের স্বভাবই হলো অতীত ভুলে যাওয়া অথবা প্রয়োজনের খাতিরে উপেক্ষা করা। বিজেপি নেতার প্রস্তাবিত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গড়ার এই নকশা মূলত ভারতের প্রতিবেশী দেশ চীনের। ২০০৯ সালের আগস্টে চীনের নীতিনির্ধারকদের দ্বারা পরিচালিত চীনা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ নামের একটি সংগঠনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ভারতের ভেতরে থাকা ২০-৩০টি রাষ্ট্রকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মতোই স্বাধীন করে দেওয়া উচিত। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের লেখক জান লুই। আর এর শিরোনাম ছিল, ‘ইফ চায়না টেকস এ লিটল অ্যাকশন, দ্য সো-কলড গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেডারেশন ক্যান বি ব্রোকেন আপ’।

নিবন্ধে আরো বলা হয়, চীনা লেখকের ওই প্রতিবেদনে ভারতকে ‘হিন্দু ধর্মভিত্তিক দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের ভেতর বাস করা অসমীয়া, তামিল ও কাশ্মীরিদের পাশে এশিয়ার অগ্রগতির জন্যই চীনের দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করা হয় ওই প্রতিবেদনে।