bsec lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে । একদিকে শেয়ার ধারণে শিথিলতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ আর অন্যদিকে রয়েছে আইনি জটিলতা। একইসঙ্গে শিথিলতায় আপত্তি রয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)।

সব মিলিয়ে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, কোম্পানির ন্যূনতম দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে শিথিলতার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে ডিএসইর।

মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আকারের ভিত্তিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে শর্ত আরোপের কথা বলা হয়েছে। ঈদের ছুটির পরেই বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ-সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাব দেবে সংস্থাটি। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর বোর্ডসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশ প্রতিক্ষণকে জানান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী পরিচালকদের শেয়ার ধারণের শর্ত শিথিল করতে নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু স্টেকহোল্ডারদের আপত্তি ও আইনি বিষয় চিন্তা করে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএসইসি। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যদিও একটি খসড়া ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

‘উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে আন্তর্জাতিক কোনো মানদ- নেই’ উল্লেখ করে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যদি শেয়ার ধারণের শর্তে পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে যারা আগে এ শর্তের কারণে পরিচালক পদ হারিয়েছিলেন, তারা বিএসইসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।

এতে নতুন করে জটিলতায় পড়তে পারে বিএসইসি।’ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণে ন্যূনতম সীমা বেঁধে না দিয়ে কোম্পানির সুশাসন ও জবাবদিহিতার প্রতি বিএসইসির আরও বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে।

আর ২০০ কোটি থেকে ৪৯৯ কোটি টাকা পর্যন্ত পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির পরিচালকদের জন্য এককভাবে ন্যূনতম এক দশমিক পাঁচ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ২০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতার বিধান রেখে খসড়া তৈরি করেছে বিএসইসি। কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ধারণের শর্তে পরিবর্তন আনতে ইতোমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতও চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন পরিচালক বলেন, ‘কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ধারণ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ, ডিএসইর আপত্তি ও আইনি জটিলতা নিয়ে ব্যাপক চাপে আছে বিএসইসি। এসব জটিলতা ও আমাদের চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

তবে খুব শিগগিরই একটি সিদ্ধান্তের দিকে যাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।’ প্রস্তাবিত নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন হলে কোম্পানির পরিচালকদের গণহারে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যাবে বলে মনে করেন রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানির মালিকানায় পরিচালকদের শেয়ার বেশি থাকলে কোম্পানির প্রতি তাদের আন্তরিকতা কিংবা দায়িত্ববোধ বেশি থাকে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আগের নিয়মটি বহাল রাখা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসির নৈতিক দায়িত্ব।’ প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের সময় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রায় প্রতিদিনই উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসতে থাকে। বিক্রয় চাপ কমাতে বিএসইসি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি রোধে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে নির্দেশনা জারি করে।