Mr.-Sajan-Kumar-Basakব্যাংকের লোন ও দুদকের মামলাসহ নানা কারণে স্পন্দন ব্র্যান্ডের রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উৎপাদনসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রমে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। আর সমস্যাগুলো সমাধান করে ভালোভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারলে কোম্পানিটি প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা প্রফিট করতে পারবে। এমনটাই জানিয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালক স্বজন কুমার বসাক। গত রোববার রাজধানীর কাকরাইলে নিজ কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সঙ্গে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। তারই চুম্বক অংশ সম্মানিত পাঠক ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান।

দেশ প্রতিক্ষণ: শুনেছি বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে খুব শিগগিরই এমারেল্ড অয়েল পুরোপুরি বানিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। এক্ষত্রে কতোদিন সময় লাগতে পারে?

স্বজন কুমার বসাক : আশা করছি আগামী ১ মাসের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সমস্যা সমাধান হওয়ার পর খুব দ্রুতই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাবে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। যদিও এখন ক্ষুদ্র পরিসরে উৎপাদন চালু রয়েছে।

দেশ প্রতিক্ষণ : শুনেছি সমস্যা সমাধানে পরিচালকদের কিছু শেয়ার বিক্রি করার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে কত শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হবে?

স্বজন কুমার বসাক : কোন শেয়ার বিক্রি করা হবে না। তবে এমডিসহ পরিচালকদের মোট ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিতে। এই ৩০ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশ শেয়ার একটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে সেটা কোন প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর হবে তা এই মূহুর্তে বলা যাবে না। মোট কথা সমস্যা সমাধানে কোম্পানিতে নতুন করে ম্যানেজমেন্ট আনা হবে। কারণ এমারেল্ড অয়েল বর্তমানে যে সমস্যায় পড়েছে তা মূলত ম্যানেজমেন্টের কারণেই।

দেশ প্রতিক্ষণ : কারা এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজমেন্টে যোগ হচ্ছে? তাদের সাথে আপনাদের যোগাযোগ কোন পর্যায়ে রয়েছে?

স্বজন কুমার বসাক : বেশ কয়েকটি কোম্পানি আমাদের ম্যানেজমেন্টে যোগ দেয়ার জন্য আাগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে আমরা বেছে নিয়েছি। গ্রুপটি আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। আমরাও তাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আশা করছি আগামী ১ মাসের মধ্যে তাদের সাথে আমরা সমঝোতায় আসতে পারবো। কোম্পানির স্বার্থে এই মূহুর্তে গ্রুপটির নাম প্রকাশ করা যাবে না।

দেশ প্রতিক্ষণ : বর্তমানে কোম্পানির কত কোটি টাকার ঋণ রয়েছে? আর কাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে?

স্বজন কুমার বসাক : বর্তমানে কোম্পানির ১৩০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ রয়েছে। আর এই ১৩০ কোটির মধ্যে সুদে আসলে ৮৫ কোটি টাকার ওপরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঋণ নেয়া হয়েছে ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ফাইন্যান্সসহ আরও ২/১ টি কোম্পানির কাছ থেকে। তবে বেসিক ব্যাংক থেকে অতীতে ৬১ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে আইপিওতে আসার পর ২৮ কোটি টাকা লোন পরিশোধ করা হয়েছিল। বাকি ছিল ৩৩ কোটি টাকা। এই ৩৩ কোটি টাকা পরবর্তীতে সুদে-আসলে ৮৫ কোটি টাকার ওপরে চলে গেছে। এই ৮৫ কোটি টাকা বাদে বাকি টাকা যাদের কাছ থেকে ঋণ বাবদ নেয়া হয়েছে সেগুলো কোন সমস্যার পর্যায়ে নেই। এখন মূল সমস্যা বেসিক ব্যাংকের ঋণ।

দেশ প্রতিক্ষণ : ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংকের সাথে কোম্পানির সর্বশেষ কি কথা হয়েছে।

স্বজন কুমার বসাক : ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংক যেমন সমঝোতায় আসতে চায়; তেমনি আমরাও আসতে চাই। বর্তমানে বেসিক ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট আন্তরিক। রিশিডিউল বা ১ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে পারলে ব্যাংকটি ২০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দেবে। সর্বশেষ তাদের সাথে এ ধরনেরই কথা হয়েছে।

দেশ প্রতিক্ষণ : কোম্পানির উৎপাদন বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে?

স্বজন কুমার বসাক : বর্তমানে ক্ষুদ্র পরিসরে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। আগামী ঈদ পর্যন্ত এই পরিসরেই উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। তবে শেয়ারহোল্ডারদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই একটা পজেটিভ রেজাল্ট আসবে।

দেশ প্রতিক্ষণ: নতুন ম্যানেজমেন্টে যারা আসবেন তাদের কর্মদক্ষতা সর্ম্পকে কিছু বলেন?

স্বজন কুমার বসাক : তাদের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে সার্টিফাইড করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা অনেক উচু মাপের। তারা বর্তমানে দেশে লিডিং পজিশনে আছে। আশা করি গ্রুপটি যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর সমস্যায় পড়বে না কোম্পানিটি।

দেশ প্রতিক্ষণ : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঋণ কেলেঙ্কারি মামলায় কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল গণি গালিব বর্তমানে কি অবস্থায় রয়েছেন?

স্বজন কুমার বসাক : দুদকের মামলায় তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তিও পেয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা আমি জানি না। তবে শুনেছি তার ৭৫ শতাংশ কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। সম্ভবত তিনি সেকারণেই চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে গেছেন। এর বেশি কিছু এই মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়।

দেশ প্রতিক্ষণ : আপনার নিজেরও শেয়ার রয়েছে এই কোম্পানিতে। কোম্পানিটিকে আপনি ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে দেখতে চান?

স্বজন কুমার বসাক : আমার শেয়ার রয়েছে খুব সামান্যই। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে, কোম্পানির স্বার্থে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কোম্পানিটিকে কিছুটা আগলে রেখেছি। অতিতে সঠিকভাবে এগোতে পারলে কোম্পানিটি বর্তমানে লিডিং পজিশনে থাকতো। যাই হোক আমরা সেটা করতে পারিনি। তবে কোম্পানির মূল সমস্যা হচ্ছে ফাইন্যান্স। ফাইন্যান্সের সমস্যা সমাধান হলে কোম্পানির সকল সমস্যা খুব দ্রুতই সমাধান হবে। আর ভবিষ্যতে কোম্পানিটিকে আমি লিডিং পজিশনে দেখতে চাই।

দেশ প্রতিক্ষণ : এমারেল্ড অয়েল নিয়ে আপনার অভিমত ব্যক্ত করার জন্য ধন্যবাদ।

স্বজন কুমার বসাক : আপনাকেও ধন্যবাদ