Bangladesh-Bank-Logoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা এখন ৬৮ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে গত একবছরের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে ৬ হাজার ৪৭৩ জন। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৪১৮ জন। আর এই বছরের জুন শেষে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৮৯১ জনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ২ হাজার ৯৪০ জন। আর ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ হাজার ৯৪ কোটিপতি। গত মার্চে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৯৫১ জন এবং ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৯৭ জন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার অর্থ হলো টাকাওয়ালাদের কাছে ব্যাংকিং খাত জিম্মি হয়ে পড়ছে। এটা হয়েছে, কল্যাণ অর্থনীতির নীতি থেকে সরে যাওয়ার কারণে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনুসরণ করছে। যা মূলত আমেরিকার নীতি। এই নীতিতে মূলত জোরজুলম করে, যেনতেনভাবে টাকা বানানো হয়। এখন বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৮ হাজার ৮৯১ জন কোটিপতির মধ্যে ৫০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৮৫৩ জন। তিন মাস আগে ৫০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত রাখা ব্যক্তি ছিলেন ৭৮৪ জন।

বর্তমানে এককোটি টাকা ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩১৭ জন। একবছরের ব্যবধানে এক কোটি টাকা ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৫৪ জন। অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুনে এই সংখ্যা ছিল ছিল ৪৯ হাজার ৪৬৩ জন। তিন মাস আগে এই সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৮৭ জনে।

জুন শেষে ৪০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন, এমন ব্যক্তি রয়েছেন ৩৮৭ জন। ব্যাংক খাতে ৩৫ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১৭৭ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ২৫৯ জন। ২৫ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৪৫৫ জন। ব্যাংক খাতে ২০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৭৪২ জন। ১৫ কোটি টাকারও বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ১ হাজার ২৭০ জন। ১০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ৬৯৮ জন। ৫ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৭ হাজার ৭৩৩ জন।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় অনেকেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন। যারা ডাবল স্কিমে ৬ বা ৭ বছর আগে ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন, এখন তাদের টাকা দ্বিগুণ হয়েছে। এভাবে কোটিপতির সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ক্রমেই ধনী হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সমাজে বৈষম্যও বাড়ছে ।’

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। তখন তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ১০ শতাংশ।

এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৩ জন ও আমানতের পরিমাণ ১২ শতাংশ। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতির মোট সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৪ জন ও আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জন।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২ বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৮) ৫ হাজার ১১৪ জন। এরও আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে (অক্টোবর ২০০১-ডিসেম্বর ২০০৬) কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপরে হিসাব সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ১৩০টি। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৫৩৭টি।