dseফাতিমা জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার হিসাবে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার বলে ডিএসইর ট্রেক হোল্ডারা মনে করেন।

চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম কৌশলগত বিনিয়োগকারী হলে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত হবে। যা শেয়ারবাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক। আর এই সত্যকে অনুধাবন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে শুরু করে সবাই চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার বিষয়ে আন্তরিক সব মহল।

ডিএসই বিদায়ী পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যথাসময়ে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। চীনা কনসোর্টিয়াম কৌশলগত বিনিয়োগকারী হলে, ডিএসই আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত হবে। একইসঙ্গে দেশের শেয়ারবাজার উপকৃত হবে। আর স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ের নতুন নতুন রাস্তা তৈরী হবে। এছাড়া দেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে।

তিনি বলেন, চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার লক্ষ্যে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য আগামি ৩০ এপ্রিল বিশেষ সাধারন সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এরপরেই চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে প্রস্তাব দাখিল করা হবে। আর এই প্রস্তাব বিএসইসি অনুমোদন দেবে বলে আশাবাদি তিনি।

এছাড়া বিএসইসির কমিশনারগণ এখন চীনা কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে ইতিবাচক বলে জানান তিনি। আর বিএসইসির চেয়ারম্যান এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক বলে যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে বিএসইসির সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। যা নিয়ে চীনা কনসোর্টিয়াম উদ্বিগ্ন হয়েছিল। তবে এখন চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য খুবই আন্তরিক। এবং সেলক্ষে তারা কাজ করছে।

কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে চীনা কনসোর্টিয়াম বিএসইসির দেওয়া শর্ত পরিপালনে ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান। এলক্ষে এরইমধ্যে চীনা কনসোর্টিয়াম ও ডিএসইর মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এতে ডিএসইর বোর্ড, ম্যানেজম্যান্ট ও চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। এছাড়া উভয় পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিল।

শরীফ আতাউর রহমান বলেন, বৈঠকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার লক্ষে চীনা কনসোর্টিয়াম সহযোগিতা করেছে। তারাও বিএসইসির শর্ত পরিপালনে আন্তরিক। এছাড়া চীনকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার জন্য বিএসইসিও ইতিবাচক। সব মিলিয়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যু ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। যাতে যথাসময়ে চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিন।

তিনি আরও বলেন, এখন চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করা একটি পক্রিয়ার বিষয়। চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি দল নিজ দেশে আলোচনা করবে। এছাড়া বিএসইসির শর্ত পরিপালনে আমাদেরও কিছু কাজ করতে হবে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার পিছিয়ে আছে। এক্ষেত্রে ডিএসইর কৌশলগত অংশিদার পুঁজিবাজারের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হবে। ডিএসই বেস্ট কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিয়েছে।

পুঁজিবাজারের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কৌশলগত পার্টনার ভবিষ্যত ব্যবসা তৈরী করবে, টার্নওভার বাড়াবে এবং তাদের অংশগ্রহণে লেনদেনের পরিবেশও পরিবর্তন হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বহুগুণে বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম তাদের লাভের জন্যই ঢাকার পুঁজিবাজারের চেহারা পাল্টানোর চেষ্টা করবে।

উল্লেখ্য, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। তবে শর্ত অনুযায়ি, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে লভ্যাংশ নেওয়ায়, ওই দর কমে এসেছে ২১ টাকায়। এক্ষেত্রে ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ার প্রতিটি ২১ টাকা দামে ৯৪৫ কোটি টাকায় কিনবে।

পাশাপাশি ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। যাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে ১ হাজার ২৪৫ কোটিরও বেশি টাকা পাবে ডিএসই।